Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

ব্যাকরণ-ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থ-ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কয়টি

আমাদের আজকের টপিক ব্যাকরণ সংক্রান্ত আদ্যোপান্ত। অর্থাৎ ব্যাকরণ কাকে বলে? ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থ ও ব্যাকরণের আলোচ্য কয়টি ও কি কি? প্রথমেই আমরা জানব ব্যাকরণ কি, কোথা থেকে এর উৎপত্তি এবং ঠিক কি কারণে ব্যাকরণের প্রয়োজন। বাংলা ব্যাকরণের ইতিহাস সুদীর্ঘ কালের হলে ও এটি সংস্কৃতের রাহু মুক্ত হতে পারে নি। বাংলা ব্যাকরণে সংস্কৃতের গন্ধ পাওয়া যায় । এমনকি অনেক নিয়ম কানুন সরাসরি বাংলা ব্যাকরণে যুক্ত হয়েছে । যেমন কারক ও বিভক্তি সংস্কৃত থেকে এসেছে। সংস্কৃত কারকের সাথে বাংলা কারকের পার্থক্য থাকলে ও বেশ মিল রয়েছে। কারণ এর জন্মই সংস্কৃত কারক থেকে। আজকের পাঠে আমরা কে বা কাদের হাত ধরে বাংলা ব্যাকরণ আজকের পর্যায়ে এসেছে তার সবকিছুই আজ আমরা জানব।

ব্যাকরণ কাকে বলে

ব্যাকরণকে বলা হয় ভাষার সংবিধান।ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম শৃঙ্খলার আলোচনাই ব্যাকরণ। ব্যাকরণ বিশ্লেষণ করে—নির্দেশ করে না বা বিধি প্রণয়ন করে না, বর্ণনা করে মাত্র। ব্যাকরণ ভাষার প্রকৃতি ও স্বরুপ বিশ্লেষণ করে এবং অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুন,রীতিনীতি শৃঙ্খলাবদ্ধ করে থাকে।ভাষা নদীর মতো প্রবাহমান।এ প্রবাহই ভাষার প্রাণ।মুখে মুখে ভাষার যে পরিবর্তন ঘটে তাতে অনেক নতুন নিয়মের সৃষ্টি হয়। সে নিয়ম কালক্রমে ব্যাকরণের অন্তর্ভূক্ত হয়। ভাষা ব্যাকরণকে নয় বরং ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ আকৃতি ও প্রয়োগের নীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সেই শাস্ত্র কে বলে সেই ভাষার ব্যাকরণ। ব্যাকরণ হল ভাষার বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ।অর্থাৎ যা প্রমাণিত এবং সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেসব নিয়মকানুনই ব্যাকরণের অন্তভুর্ক্ত হবে। কাজেই আমরা বলতে পারি ভাষা ব্যাকরণকে নয় বরং ব্যাকরণই তার গতিপথ বদলায় ভাষাকে অনুসরণ করে।কারণ ভাষা পরিবর্তনশীল এবং সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রমিত বিধানই ব্যাকরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে

"ব্যাকরণ" (বি+আ+কৃ+অন ) একটি সংস্কৃত শব্দ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা। কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে সেই ভাষার উপকরণ এবং উপাদানগুলোকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে ভাষার অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা সম্পর্কে জানা যায়। ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ । ব্যাকরণ ভাষার শৃঙ্খলা রক্ষা করে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং তা প্রয়োগের রীতি সুত্রবদ্ধ করে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধ রুপে লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায়,তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ । ব্যাকরণের আলোচ্য কয়টি ও কি কি তা জানার আগে চলুন আমরা ধাপে ধাপে জেনে আসি ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থের ক্রমবর্ধমান ইতিহাস। অর্থাৎ শুরুতে কারা ব্যাকরণ রচনা সাথে জড়িত ছিলেন এবং তাদের অবদান কি বাংলা ব্যাকরণকে আজকের পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে।

পাণিনি কে ছিলেন

পাণিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বৈয়াকরণ ছিলেন। তার রচিত বিখ্যাত ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম 'অষ্টাধ্যায়ী' । সংস্কৃত ব্যাকরণ চর্চায় যাঙ্ক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী , পাণিনি খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী, কাত্যায়ন ও পতঞ্জলি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। পাণিনি, কাত্যায়ন ও পতঞ্জলি ব্যাকরণ শাস্ত্রের ত্রিমুনি নামে অভিহিত। পতঞ্জলি ছিলেন পাণিনির ব্যাকরণের ঘোর সমর্থক আর কাত্যায়ন ছিলেন সমালোচক।

পৃথিবীর প্রথম ব্যাকরণের নাম কী

খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে ল্যাটিন ভাষায় “ডি লিঙ্গুয়া ল্যাটিনো” নামে প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন ভাররো। ল্যাটিন ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ “ইনস্টিটিউনেস গ্রাম্মাতিকেই” নামে রচনা করেন প্রিস্কিয়ানস।

বাংলা ব্যাকরণের প্রথম গ্রন্থের নাম কী

পর্তুগিজ ভাষায় মনোএল দ্য আসসুম্পসাও রচিত `Vocabulario Em Idioma Bengalla , E Portuguez Dividido Em Duas Partes’ . এটি রোমান হরফে ১৭৪৩ সালে লিসবন থেকে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত একটি অভিধান।

বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম কী

বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণ রচয়িতা ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড । তাঁর A Grammar of the Bengal Language গ্রন্থটি ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে চার্লস উইলকিনসের হুগলীর মুদ্রণযন্ত্র থেকে এর অংশ বিশেষ বাংলায় মুদ্রিত হয়। ব্রাসি হ্যালহেড সর্বপ্রথম বাংলা টাইপ সহযোগে বাংলা ব্যাকরণ মুদ্রণ করেন।

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার প্রথম প্রচেষ্টা কে করেন

“বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ” (১৮২১) নামে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার প্রথম প্রচেষ্টা চালান রাধাকান্ত দেব

বাঙ্গালি রচিত বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম কি

রাজা রামমোহন রায় রচিত “Benali Grammar in English Language”. যা ১৮২৬ সালে প্রকাশিত হয়। এটি পরবর্তীতে ১৮৩৩ সালে তিনি “গৌড়ীয় ব্যাকরণ” নামে অনূদিত করেন যা বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত।

ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থ

ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থ
গ্রন্থের নামভাষারচয়িতা
Vocabulario Em Idioma Bengalla , E Portuguez Dividido Em Duas Partesপর্তুগিজমনোএল দ্য আসসুম্পসাও
A Grammar of the Bengal Languageইংরেজিন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড
A Grammar of the Bengal Languageইংরেজিউইলিয়াম কেরী
Benali Grammar in English Language (১৮২৬)ইংরেজিরাজা রামমোহন রায়
গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩)বাংলারাজা রামমোহন রায়
বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৮৫২) বাংলায় অনূদিতইংরেজিশ্যামাচরণ সরকার
ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩)বাংলাঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ভাষাবোধ বাঙ্গালা ব্যাকরণবাংলানকুলেশ্বর বিদ্যাভুষণ
ব্যাকরণ মঞ্জরীবাংলাড.মুহাম্মদ এনামুল হক
বাংলা ব্যাকরণবাংলাড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আধুনিক বাংলা ব্যাকরণবাংলাজগদীশ চন্দ্র ঘোষ
বাংলা ভাষার ব্যাকরণবাংলামুনীর চৌধুরী, ও মোফাজ্জল হায়দার
অভিনব ব্যাকরণবাংলাকাজী দীন মুহাম্মদ ও সুকুমার সেন
ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণবাংলাড. সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায়
প্রমিত ভাষার বাংলা ব্যাকরণবাংলারফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার
The Origin and Development of the Bengali Language (ODBL)ইংরেজিড. সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায়

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কয়টি ও কি কি

ড.মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ব্যাকরণের পরিধিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ

ক. ধ্বনি প্রকরণ
খ. শব্দ প্রকরণ
গ. বাক্য প্রকরণ
ঘ. ছন্দ প্রকরণ ও
ঙ. অলংকার প্রকরণ

সকল ভাষার ব্যাকরণেই প্রধানত চারটি বিষয় আলোচিত হয় যথাঃ

১। ধ্বনিতত্ত্ব (phonology)
২। শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology)
৩। বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax)
৪। অর্থতত্ত্ব (Semantics)

তাছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography), ছন্দ ও অলংকার প্রভৃতি ও ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় ।

Pro Tips: সহজ ভাষায় ধ্বনি,বর্ণ ও সন্ধি ছাড়া বাকি সবকিছু শব্দতত্ত্ব বা রুপততত্ত্বের আলোচ্য বিষয় একমাত্র বাক্য ও অর্থতত্ত্ব ছাড়া।

ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়

ধ্বনি, ধ্বনির উচ্চারণ, ধ্বনির বিন্যাস, ধ্বনির পরিবর্তন ও লোপ , বর্ণ , সন্ধি , ষ-ত্ব বিধান, ণ-ত্ব বিধান

শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়

শব্দের প্রকার , পদের পরিচয় , শব্দগঠন, উপসর্গ , প্রত্যয় , বিভক্তি, লিঙ্গ , বচন , ধাতু, শব্দরূপ, কারক , সমাস , ক্রিয়া-প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল , ক্রিয়ার ভাব , শব্দের ব্যুৎপত্তি।

বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রমের আলোচ্য বিষয়

বাক্য, বাক্যের অংশ, বাক্যের প্রকার , বাক্য পরিবর্তন , পদক্রম , বাগধারা , বাক্য সংকোচন , বাক্য সংযোজক, বাক্য বিয়োজক, বাচ্য, যতিচ্ছেদ বা বিরামচিহ্ন ইত্যাদি।

অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়

শব্দের অর্থবিচার,বাক্যের অর্থবিচার,অর্থের বিভিন্ন প্রকারভেদ।

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...