Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

পদার্থের অবস্থা ও তাদের পরিবর্তন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা বায়ু, পানি, লোহা, খাবার, বই ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ধরনের বস্তু ব্যবহার করে থাকি। সেগুলো দেখতে বিভিন্ন রকম। কোনোটা গ্যাস, কোনোটা তরল, কোনোটা নরম, কোনোটা কঠিন, কোনোটা ভারী, কোনোটা হাল্কা, কোনোটা চকচকে। পদার্থের এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার কারণ হলো এগুলোর গঠন। পদার্থের অবস্থা ও তাদের পরিবর্তনের জন্য এগুলোর গঠন যেমন দায়ী তেমনি তাপ ও চাপের প্রভাবে একই পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে । যেহেতু পদার্থগুলোর গঠন একে অপরের থেকে ভিন্ন, তাই সেগুলো দেখতে ভিন্ন এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন হয়। পদার্থগুলোর এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। আজকের এই টিউটরিয়ালে পদার্থের অবস্থা ও তাদের পরিবর্তন এবং শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পদার্থের অবস্থা ও তাদের পরিবর্তন

পদার্থের অবস্থা

পদার্থ: যে সকল বস্তুর ভর ও নির্দিষ্ট আয়তন আছে ,বল প্রয়োগে বাঁধা প্রদান করে,তাদেরকে পদার্থ বলে । বাতাস একটি পদার্থ। এর ভর আছে এবং স্থান দখল করে। পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে - কঠিন, তরল ও বায়বীয় ।

কঠিন পদার্থ : সাধারণত কঠিন পদার্থের জড়তা আছে। এদের নির্দিষ্ট আকার, আয়তন ও কম-বেশি দৃঢ়তা আছে। এদের অণুসমূহ পরস্পরের অতি সন্নিকটে থাকে। বিভিন্ন ধাতু, পাথর কঠিন পদার্থের উদাহরণ।

তরল পদার্থ : এদের নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে। তরল পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকটে থাকে, কিন্তু তাদের মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের ন্যায় প্রবল নয়। অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে বলে তরল পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার নেই ।

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ এদের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই। কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসীয় পদার্থ তা যত অল্প হোক না কেন, কোন বড় বা ছোট পাত্রে রাখা হলে, তার সকল স্থান দখল করে এবং সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। কিন্তু পাত্রের আকার বা আকৃতিভেদে ভরের কোন তারতম্য হয় না। গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি। তাই আকর্ষণ শক্তি কম। ফলে অণুসমূহ প্রায় সম্পূর্ণ মুক্তভাবে চলাচল করে।

কঠিন পদার্থতরল পদার্থগ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ
১. কঠিন পদার্থের জড়তা আছে।১. এদের নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। যখন যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে ।১. এদের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই ।
২. এদের নির্দিষ্ট আকার, আয়তন এবং কম-বেশি দৃঢ়তা আছে।২. তরল পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকটে থাকে, কিন্তু অণুসমূহের মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের অণুসমূহের মতো প্রবল নয়।২. কোনো নির্দিষ্ট গ্যাসীয় পদার্থ তা যত অল্পই হোক না কেন, কোনো বড় বা ছোট পাত্রে রাখা হলে, তার সম্পূর্ণ স্থান দখল করে এবং সে পাত্রের আকার ধারণ করে কিন্তু পাত্রের আকার বা আকৃতিভেদে ভরের কোনো তারতম্য হয় না ।
৩. এদের অণুসমূহ পরস্পরের অতি সন্নিকটে থাকে ।৩. অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে।৩. গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি কম। ফলে অণুসমূহ প্রায় সম্পূর্ণ মুক্তভাবে চলাচল করে।

যে পদার্থ প্রকৃতিতে কঠিন, তরল ও বায়বীয় এই তিন অবস্থাতেই পাওয়া যায়: পানি। (কঠিন- বরফ, তরল-পানি ; বায়বীয়- জলীয় বাষ্প )

'বরফ , পানি ও বাষ্প একই পদার্থের তিনটি রূপ :
অর্থাৎ বরফ, পানি ও বাষ্প বিভিন্ন তাপমাত্রায় কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় বিরাজ করতে পারে। কারণ-
১. বরফকে তাপ দিলে তা পানিতে রূপান্তরিত হয়।
২. পানিকে তাপ দিলে তা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় ।
৩. জলীয় বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়।
৪. আবার পানিকে নিম্ন তাপমাত্রায় নিয়ে গেলে কঠিন বরফে পরিণত হয়।

পদার্থশক্তি
ভর আছে।ভর নাই ।
স্থান দখল করে অবস্থান করে।স্থান দখল করে না ।
উদাহরণঃ বাতাস, পানি ।উদাহরণঃ তাপ, আলোক, বিদ্যুৎ।

আন্তঃআণবিক শক্তি : অণুসমূহ পরস্পরকে যে শক্তিতে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি বলে। আন্তঃআণবিক শক্তির কারণে অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকটে থাকতে চায় কিন্তু অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কম্পন বৃদ্ধি পায় এবং অণুসমূহ পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। আন্তঃআণবিক শক্তি নির্ভর করে পদার্থের প্রকৃতির উপর। আন্তঃআণবিক শক্তির তুলনায় গতিশক্তি কম হলে অণুসমূহ নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে। অর্থাৎ কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। যে সকল বস্তুর আন্তঃআণবিক শক্তি বেশি, তাদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি। আন্তঃআণবিক শক্তি কম হওয়ায় গ্যাসীয় পদার্থসমূহের গলনাঙ্ক 0°C এর চেয়ে অনেক কম।

সর্বাপেক্ষা হালকা গ্যাস : সর্বাপেক্ষা হালকা গ্যাস হাইড্রোজেন। যে গ্যাসের পারমাণবিক সংখ্যা যত কম সে গ্যাস তত হালকা। হাইড্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ১ (এক), এজন্য হাইড্রোজেন সবচেয়ে হালকা গ্যাস। হাইড্রোজেন এতটাই হালকা যে তা বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করে না। কোন গ্যাস কতটা হালকা তা নির্ভর করে তার ঘনত্বের উপর। নিচে বাতাসের চেয়ে কম ঘনত্বের গ্যাসের ঘনত্ব দেখানো হয়েছে।

পদার্থঘনত্ব ( গ্রাম/মিলি)
হাইড্রোজেন০.০০০০৮৯
হিলিয়াম০.০০০১৮
বাতাস০.০০১২৮
কার্বন-ডাই-অক্সাইড০.০০১৯৭৭
পানি

পরম শূন্য তাপমাত্রা: চালর্সের সূত্রানুসারে, -273° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় যে কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে। কিন্তু - 273° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পূর্বেই সব গ্যাস তরল অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। তাই −273° সে. তাপমাত্রায় সত্যিই গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায় কিনা তার কোনো পরীক্ষালব্ধ বাস্তব প্রমাণ নেই। তথাপি অঙ্কের হিসাবে ধরা যায় যে, −273° সে. তাপমাত্রায় যে কোনো গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে। তাই -273° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় যে কোনো গ্যাসের আয়তন তাত্ত্বিকভাবে শূন্য হয়ে যায় বলে একে ‘পরম শূন্য তাপমাত্রা ' বলে।

আদর্শ গ্যাসঃ যেসব গ্যাস সব তাপমাত্রায় ও চাপে বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগেড্রোর সূত্র মেনে চলে তাদেরকে আদর্শ গ্যাস বলে। অন্যকথায় যেসব গ্যাস একই তাপমাত্রা ও চাপে আদর্শ গ্যাসের অবস্থার সমীকরণ মেনে চলে তাদেরকে আদর্শ গ্যাস বলে ৷ প্রকৃতপক্ষে কোনো গ্যাসই সব তাপমাত্রা ও চাপে আদর্শ গ্যাসরূপে আচরণ করে না। সুতরাং আদর্শ গ্যাস একটি কাল্পনিক ধারণা। তবে অতি নিম্নচাপে, যেমন- প্রায় শূন্য বায়ুচাপে ও অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় সব গ্যাসই আদর্শ গ্যাসরূপে আচরণ করে।

পদার্থের শ্রেণীবিভাগ

উপাদান এবং সংযুতি অনুসারে পদার্থকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা :১. মিশ্রণ ২. খাটি বস্তু । এর মধ্যে মিশ্রণ দুই প্রকার যথা সমসত্ত্ব মিশ্রণ ও অসমসত্ত্ব মিশ্রণ । খাটি বস্তুকে ও আবার দু্ই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা : মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ । এর মধ্যে মৌলিক পদার্থ দু ধরনের যথা: অধাতু ও ধাতু এবং যৌগিক পদার্থ ও দু ধরনের যথা জৈব যেীগ ও অজৈব যৌগ ।

খাটি বস্তু :

মৌল বা মৌলিক পদার্থ: যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করে অন্য কোন সরল বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলা হয়। যেমনঃ হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, সোনা, তামা, লোহা ইত্যাদি ।
এ পর্যন্ত IUPAC সর্বমোট ১১৮টি মৌলিক পদার্থ সনাক্ত করেছে।
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা: ৯৮
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে হালকা মৌলের নাম: হাইড্রোজেন ।
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবচেয়ে ভারী মৌলের নাম: ইউরেনিয়াম । সর্বশেষ আবিষ্কৃত মৌলের নাম: ওগানেসন (Oganesson)
মৌলিক পদার্থকে গুণের ক্রমানুসারে ভাগ কর যায়: দুইটি। যথা: ধাতু এবং অধাতু।

ধাতু : যেসব উপাদান সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়, পিটিয়ে পাত করা যায়, ঘষলে চকচক করে সেসব উপাদানকে ধাতু বলে । যেমন- আয়রন, কপার, সোডিয়াম ইত্যাদি । স্বাভাবিক উষ্ণতায় বেশীরভাগ ধাতুই কঠিন অবস্থায় থাকে। কিন্ত পারদ স্বাভাবিক উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে। তাই পারদকে "তরল ধাতু" বলা হয়।
অধাতু : যেসব উপাদান সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, আঘাত করলে তেমন শব্দ হয় না,পিটিয়ে পাত করা যায় না সেসব উপাদানকে অধাতু বলে । এগুলি বেশিরভাগই গ্যাস এবং কখনও কখনও তরল। ব্রোমিন হল একমাত্র অধাতু যা কক্ষ তাপমাত্রায় তরল হিসেবে থাকে।

যৌগ বা যৌগিক পদার্থ (Compound): যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলা হয়। যেমন - পানি । এটি অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত। ১৭৮১ সালে বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস হাইড্রোজেন ও বায়ুর মিশ্রণে পানি উৎপন্ন করে প্রমাণ করেন যে, পানি একটি যৌগিক পদার্থ। এর পূর্বে পানিকে মৌলিক পদার্থ হিসেবে ধরা হত। আয়তন হিসেবে পানিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১। পানি একমাত্র তরল যার তরল অবস্থার চেয়ে কঠিন অবস্থার ঘনত্ব কম। কয়েকটি যৌগিক পদার্থের উদাহরণ হল : ফসফিন, ইস্পাত, ইউরিয়া, পানি, লবণ প্রভৃতি।

মিশ্রণ: দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোন অনুপাতে একত্রে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে মিশ্রণ বলা হয় ।

সমসত্ত্ব মিশ্রণ ও অসমসত্ত্ব মিশ্রণ:
সমসত্ত্ব মিশ্রণ :যে মিশ্রণে মিশ্রণের উপাদানসমূহের অনুপাত মিশ্রণের সর্বত্র সমান থাকে এবং যাতে একাধিক পদার্থের উপস্থিতি বাইরে থেকে খালি চোখে বোঝা যায় না তাকে সমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে।
অসমসত্ত্ব মিশ্রণ : যে মিশ্রণের বিভিন্ন অংশে মিশ্রণের উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে থাকে এবং তাদের উপস্থিতি বাইরে থেকে খালি চোখে দেখে বোঝা যায় তাকে অসমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে । যেমন— লবণ ও বালির মিশ্রণে লবণ ও বালির অনুপাত মিশ্রণের এক এক অংশে একেক রূপ হলে অর্থাৎ একেক অংশে লবণ অপেক্ষা বালি বেশি এবং অপর অংশে বালি অপেক্ষা লবণ বেশি হলে এরূপ মিশ্রণ অসমসত্ত্ব মিশ্রণ ।

ক্রোমেটোগ্রাফি: একটি মিশ্রণের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুকে বা পদার্থকে পৃথক করা, নির্ভেজাল করা এবং সঠিকভাবে শনাক্ত করার একটি জটিল আধুনিকতম এবং প্রয়োজনীয় পদ্ধতির নাম ক্রোমেটোগ্রাফি । ফেজ বিভাজন এর সাধারণ নীতির উপর এটা নির্ভরশীল।

পানি কি ধরনের পদার্থ ---যৌগিক / মিশ্র: পানি একটি যৌগিক পদার্থ কারণ -
[ক] দুইটি মৌল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নির্দিষ্ট ভর অনুপাতে পরস্পর যুক্ত হয়ে পানি উৎপন্ন করে ।
[খ] পানিতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের নিজ নিজ ধর্ম বজায় থাকে না।

বায়ু কি ধরনের পদার্থ ---যৌগিক/ মিশ্র: বায়ু একটি মিশ্র পদার্থ কারণ বায়ুতে উপাদান মৌলসমূহ যেমনঃ নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বনডাইঅক্সাইড ইত্যাদি নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে ।

পদার্থের পরিবর্তন

পদার্থের পরিবর্তন: পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরনের। যথাঃ
[ক] ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন
[খ] রাসায়নিক পরিবর্তন ।

ভৌত পরিবর্তন: যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের কেবল বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, কোনো নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না, সে পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলে ।

রাসায়নিক পরিবর্তন: যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু স্বীয় সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুতে পরিণত হয় তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।

ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলোঃ
[ক] কোন নতুন ধরনের বস্তু সৃষ্টি হয় না।
[খ] বস্তুর ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়।
[গ] বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয় না।
[ঘ] বস্তুর রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয় না ৷
[ঙ] এ পরিবর্তন অস্থায়ী। সাধারণ পরিবর্তনের কারণ (যেমন- তাপ ও চাপ) সরিয়ে নিলে বস্তু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
[চ] তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ ঘটতে পারে, নাও ঘটতে পারে ।

রাসায়নিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলো:
[ক] সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক বা একাধিক বস্তু সৃষ্টি হয়।
[খ] বস্তুর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়।
[গ] বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়।
[ঘ] বস্তুর রাসায়নিক সংযুক্তির পরিবর্তন হয়।
[ঙ] এ পরিবর্তন স্থায়ী। বস্তুকে পূর্বের অবস্থায় সহজে ফিরিয়ে আনা যায় না।
[চ] তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ অবশ্য ঘটবে।

একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে তা চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হল -- ইহা যে ধরনের পরিবর্তন: ইহা ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন। কারণ চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে লোহা হতে অন্য কোন পদার্থের সৃষ্টি হয় না। আবার, চুম্বকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরোকে উত্তপ্ত করেল তা চুম্বকত্ব হারিয়ে সাধারণ লোহায় রূপান্তরিত হয়।

এক টুকরা লোহা বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রাখায় তাতে মরিচা পড়ল - যে ধরনের পরিবর্তন: ইহা রাসায়নিক পরিবর্তন। কারণ লোহাকে বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে তার উপর বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প বিক্রিয়ায় পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মরিচা নামে পরিচিত। মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও পানি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷

ভৌত পরিবর্তনের উদাহরণ :
১. লোহাকে চুম্বকে পরিনত করা ৷
২. বরফকে পানিতে পরিণত করা ।
৩. কঠিন মোমকে তাপে গলানো ।
৪. চিনিকে পানিতে দ্রবীভূত করা ।
৫. বৈদ্যুতিক বাল্প জ্বালানো।
৬. পানিকে ঠান্ডা করে বরফে পরিণত করা ।
৭. পানিকে তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত করা ।

রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ :
১. লোহায় মরিচা পড়া ।
২. দুধকে ছানায় পরিণত করা ।
৩. মোমবাতির দহন ।
৪. দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো ।
৫. গাছের পাতায় খাদ্য তৈরী প্রক্রিয়া ।
৬. চালসিদ্ধ করে ভাতে পরিণত করা।
৭. পানির তড়িৎ বিশ্লেষনে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায়।

লৌহের গুঁড়া গন্ধক চূর্ণের সাথে উত্তপ্ত করলে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়: লৌহের গুঁড়া ও গন্ধক চূর্ণকে উত্তমরূপে মিশ্রিত করে একটি পরীক্ষা নলে নিয়ে তীব্র তাপে উত্তপ্ত করলে তাপের প্রভাবে লৌহ ও গন্ধকের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে একটি সম্পূর্ণ নতুন যৌগ আয়রন সালফাইড উৎপন্ন হয়। সুতরাং এটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

চাল থেকে ভাত বা মুড়ি প্রস্তুত কি ধরনের পরিবর্তনঃ
এরা প্রত্যেকেই ষ্টার্চ জাতীয় পদার্থ হলেও এদের অণুর গঠন আলাদা আলাদা; চাল থেকে ভাত বা মুড়ি হলে অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়। ভাত বা মুড়িকে পুনরায় চালে পরিণত করা যায় না। তাই, এগুলি রাসায়নিক পরিবর্তন ।

একখন্ড প্লাটিনাম তার, একখন্ড ম্যাগনেসিয়াম তার থেকে উচ্চতাপে আলোর ঝলক দেখা যায়-এটি কোন ধরনের পরিবর্তনঃ
একখন্ড প্লাটিনাম তারকে বুনসেন দীপশিখায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে তা রক্তবর্ণ হয়ে উঠে এবং পরে আরো উত্তপ্ত হলে শুভ্র সাদা আলোর ঝলক দেখা যায়। উত্তাপ দেয়া বন্ধ করলে স্বাভাবিকভাবেই তারটি শীতল হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে এবং এর আলোর বিকিরণ ক্ষমতা বিলুপ্ত হয় । অতএব, এটি একটি ভৌত পরিবর্তন ।
অপরদিকে এক টুকরা ম্যাগনেসিয়াম তারকে উত্তপ্ত করলে উচ্চতাপে আলোর ঝলক দেখা যায় এবং একপ্রকার সাদা পাউডার উৎপন্ন হয়। এ সাদা পাউডার হলো ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড। ম্যাগনেসিয়াম ও বায়ুস্থ অক্সিজেনের বিক্রিয়ার ফলে এ নতুন পদার্থ ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হয়েছে। অতএব এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন ।

মোমবাতি পোড়ালে কি ধরনের পরিবর্তন হয়:
একটি মোমবাতি পোড়ানোর সময় উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। কিন্তু ঠান্ডা হলে কঠিন মোম ফিরে পাওয়া যায়। এটি ভৌত পরিবর্তন; কিন্তু অধিকাংশ মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প তৈরি করে । শেষোক্ত বস্তু দুটি মোম ও অক্সিজেন থেকে সম্পূর্ণ পৃথক । সুতরাং মোমবাতি পোড়ানো একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

বস্তুর অবিনাশিতাবাদ সূত্রঃ
১৭৭৪ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে সর্বপ্রথম বস্তুর অবিনাশিতাবাদ সূত্রের অবতারণ করেন। সূত্রটি হল: সব রকমের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পূর্বে ও পরে বস্তুর ভরের সামান্যতম পরিবর্তন হয় না ৷

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...