Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

পর্যায় সারণি

 পর্যায় সারণি

বিভিন্ন মৌলের মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল এবং এ সকল ধর্মের ক্রম পরিবর্তন দেখানোর জন্য বিজ্ঞানীগণ সকল মৌলকে সারি ও কলামের মাধ্যমে একটি বিশেষ সারণিতে সাজিয়েছেন। এই সারণিকে পর্যায় সারণি বলা হয়। রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ সর্বপ্রথম পর্যায় সারণির ধারণা প্রদান করেন। এজন্য তাকে পর্যায় সারণির জনক বলা হয়। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির ভিত্তি পারমাণবিক ভর। পর্যায় সারণির আধুনিক সূত্র হল – মৌল সমূহের ভৌত ও রাসায়নিক - ধর্মাবলী তাদের পারমাণবিক সংখ্যানুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি পারমাণবিক সংখ্যা (১৯১৩ সালে মোসলে করেন ) । আন্তর্জাতিক রসায়ন ও ফলিত রসায়ন সংস্থা (International Union of Pure and Applied Chemistry বা সংক্ষেপে IUPAC) এ পর্যন্ত ১১৮টি মৌলিক পদার্থ সনাক্ত করেছে।

আধুনিক পর্যায় সারণির বৈশিষ্ট্য

১. পর্যায় সারণিতে ৭টি পর্যায় ও ৯টি গ্রুপ বিদ্যমান ।
২. প্রতিটি পর্যায় বামদিকে গ্রুপ I থেকে আরম্ভ করে ডানদিকে গ্রুপ 0 পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩. প্রথম পর্যায়ে ২টি মৌল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ৮টি করে, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে ১৮টি করে মৌল আছে। ষষ্ঠ পর্যায়ে আছে ৩২ মৌল। সপ্তম পর্যায় এখনও অসম্পূর্ণ।
8. মৌলসমূহের ধর্ম তাদের শ্রেণীর উপর নির্ভর করে। একই শ্রেণীভুক্ত মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে যথেষ্ট মিল থাকে। ধর্মগুলো বিভিন্ন অনুক্রমে উপর থেকে নিচের দিকে পরিবর্তিত হয়।
৫. কোন শ্রেণীতে একটি মৌলের পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেকট্রন সংখ্যা তার শ্রেণীসংখ্যার সমান হয়।

মৌলসমূহের পর্যায়ক্রমিক ধর্ম

১. একই পর্যায়ে যতই ডানদিকে যাওয়া যায় অর্থাৎ পারমাণবিক সংখ্যা যতই বাড়ে পরমাণুর আকার ততই কমতে থাকে; মৌলের যোজনী ততই বৃদ্ধি পায়; মৌলের ধাতব ধর্ম ততই হ্রাস পায় ।
২. একই পর্যায়ে যতই ডানদিকে যাওয়া যায় মৌলের তড়িৎ ধনাত্মক ধর্ম ততই হ্রাস পায় এবং ঋণাত্মক ধর্ম বৃদ্ধি পায়; অক্সাইডের ক্ষারকীয় ধর্ম হ্রাস পায় এবং অম্ল ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
৩. একই গ্রুপে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের গলনাংক ও স্ফুটনাংক ততই বৃদ্ধি পায়। গ্রুপ IA এর ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ক্রিয়াশীলতা ততই বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে গ্রুপ VIIA এর ক্ষেত্রে যতই নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ক্রিয়াশীলতা ততই হ্রাস পায় ৷

পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধাতুর সংজ্ঞা

ক্ষার ধাতু : যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার উৎপন্ন করে তাদের ক্ষার ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IA গ্রুপের মৌলগুলো হল ক্ষারধাতু। এগুলো হল লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম।

মৃৎক্ষার ধাতু : ভূত্বকের মৃত্তিকায় প্রাপ্ত যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষারক গঠন করে তাদের মৃৎক্ষার ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IIA গ্রুপের মৌলগুলো হল মৃৎক্ষার ধাতু। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো হল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম।

মুদ্রা ধাতু : মুদ্রা তৈরিতে যে সকল ধাতু ব্যবহার করা হয় তাদেরকে মুদ্রা ধাতু বলে। পর্যায় সারণীর IB গ্রুপের মৌলগুলো হল মুদ্রাধাতু। মুদ্রা ধাতুগুলো হল কপার, সিলভার, গোল্ড।

অপধাতু: যে সকল মৌল ধাতু ও অধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলো বহন করে ।

অভিজাত ধাতু: যে সকল ভারী ধাতু সহজে রাসায়নিক ক্রিয়ায় অংশ নেয় না । এরা পারস্পারিক বাতাস পানি বা সাধারণত এসিডের ক্রিয়া করে না ।

অবর ধাতু: তুলনামূলক বেশি সক্রিয় ভারী ধাতু ।

ভারী ধাতু: যে সকল ধাতুর আপেক্ষিক গুরুত্ব চার এর বেশি তাদের ভারী ধাতু বলে ।

চালকোজেন: অর্থ আকরিক উৎপন্নকারী মৌল। অধিকাংশ ধাতু প্রকৃতিতে ধাতব অক্সাইড বা সালফাইড রূপে বিদ্যমান । পর্যায় সারণিতে VIA গ্রুপে অবস্থিত।

গুরুত্বপূর্ণ টপিক :

ল্যান্থানাইড সারির মৌল: যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৫৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত, এরকম ১৫ টি মৌলকে ল্যান্থানাইড সারির মৌল বলা হয় ।

অ্যাকটিনাইড সারির মৌল: যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮৯ থেকে ১০৩ পর্যন্ত, এরকম ১৫ টি মৌলকে অ্যাকটিনাইড সারির মৌল বলা হয় ।

অবস্থান্তর মৌল: পর্যায় সারণির ৩ নং গ্রুপ থেকে ১২ নং গ্রুপের মৌলসমূহকে অবস্থান্তর মৌল বলে। এ মৌলগুলো যে যৌগ গঠন করে তার রঙিন হয় ।

পর্যায় সারণির সুবিধাগুলোঃ
১. রসায়ন পাঠ সহজীকরণ করা
২. নতুন মৌলের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে
৩. গবেষণা ক্ষেত্রে।
অবস্থান্তর মৌলের সবগুলো প্রকৃতপক্ষে: ধাতু ।

পর্যায় সারণির বিভিন্ন ধাতুর উদাহরণ

ধাতুউদাহরণ
ক্ষার ধাতুলিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম, ফ্রানসিয়াম
মৃৎক্ষার ধাতুক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, বেরিয়াম, বেরিলিয়াম
মুদ্রা ধাতুসোনা, রূপা, তামা
অপধাতুজার্মেনিয়াম, বিসমাথ, আর্সেনিক, সিলিকন,অ্যান্টিমনি, বোরন।
অভিজাত ধাতুসোনা,রূপা, প্লাটিনাম
অবরধাতুদস্তা, টিন, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ
তরল ধাতুমার্কারি, গ্যালিয়াম, ফ্রান্সিয়াম, সিজিয়াম
উজ্জ্বল ধাতুম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, সিলভার, অ্যালুমিনিয়াম
ভারী ধাতুসীসা, মার্কারি, ক্যাডমিয়াম, দস্তা
নরম ধাতুপটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লেড, সোডিয়াম
চালকোজেনঅক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম, টেলুবিয়াম
তেজস্ক্রিয় ধাতুইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, পলোনিয়াম, ফ্রান্সিয়াম, থোরিয়াম,প্রুটোনিয়াম

নিষ্ক্রিয় গ্যাস

যেসব মৌল রাসায়নিকভাবে ক্রিয়াক্ষম নয়, তাদের নিস্ক্রিয় গ্যাস বলে। এরা কোন মৌলের সাথে সংযুক্ত হতে চায় না। এমনকি নিজেরা নিজেদের সাথেও নয়।

পর্যায় সারণির ডানদিকে শূন্যগ্রুপে অবস্থিত ৬টি গ্যাসীয় মৌল হল নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এদের পরমাণুর বহিঃস্থ শেলে ইলেকট্রনের অষ্টক পূর্ণ থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস হল— হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, রেডন ও জেনন ।

এ গ্যাসগুলোর মধ্যে রেডন হল তেজস্ক্রিয় গ্যাস। রেডিয়াম মৌলের তেজস্ক্রিয় বিভাজন হতে রেডন উৎপন্ন হয়। গ্যাস হিসেবে রেডন সবচেয়ে ভারী।

হিলিয়ামের চেয়ে কেবল হাইড্রোজেন হালকা। তবে হাইড্রোজেন দাহ্য বলে বিমানে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহৃত হয়।

হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন- এই ছয়টি মৌলের শেষ কক্ষপথ ইলেক্ট্রন দ্বারা পরিপূর্ণ, অর্থাৎ হিলিয়াম ব্যতীত প্রত্যেকটি মৌলের শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেক্ট্রন রয়েছে। হিলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা দুই, তাই এর একটি মাত্র কক্ষপথ দুটি ইলেক্ট্রন দ্বারা পূর্ণ ।

তথ্য কণিকা :

নিষ্ক্রিয় গ্যাসের অন্য নাম: অভিজাত (Noble) গ্যাস/ বিরল গ্যাস ।
রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় এবং কক্ষ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় মৌলিক গ্যাস কে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে ।
যেসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে ৮টি করে ইলেকট্রন থাকে এবং অভ্যন্তরীণ কক্ষসমূহও পূর্ণ থাকে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়। তবে হিলিয়ামের শেষ কক্ষপথে ইলেকট্রন থাকে দুইটি।
নিষ্ক্রিয় ৬টি গ্যাস: হিলিয়াম(He), নিয়ন(Ne), আর্গন(Ar), ক্রিপ্টন(Kr), জেনন(Xe) ও রেডন(Rn)।
পর্যায় সারণিতে নিষ্ক্রিয় গ্যাস গুলির অবস্থান - শূন্যগ্রুপে ।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসের যোজনী - শুন্য ।
রেডিয়াম মৌলের তেজস্ক্রিয় বিভাজন হতে র‍্যাডন উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানী ডর্ন ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রেডন আবিষ্কার করেন ।
সর্বাপেক্ষা ভারী মৌলিক গ্যাস - র‍্যাডন।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসের প্রধান উৎস - বায়ু।
আর্গন আবিষ্কার করেন: বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস ১৭৮৫ সালে।
নিয়ন, ক্রিপ্টন ও জেনন গ্যাস আবিষ্কার করেন - ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী রামজে ও ট্র্যাভার্স ।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর নামের অর্থ -
আর্গন - অলস
নিয়ন - নতুন
ক্রিপ্টন - গুপ্তধন
জেনন - আগন্তুক

নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ব্যবহার

হিলিয়াম:
১ . উড়োজাহাজ ও বেলুনে অত্যন্ত হালকা বলে ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোজেন দাহ্য বলে ব্যবহার করা হয় না ৷
২. ডুবুরিগণ গভীর পানির তলায় হিলিয়াম ও অক্সিজেন মিশ্রণ ব্যবহার করে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। (হিলিয়াম ৮০% ও অক্সিজেন ২০%)

নিয়ন :
১. উজ্জ্বল লাল রঙের আলোর জন্য।
২. বিভিন্ন রঙের আলোকসজ্জায় ।
৩. কুয়াশার মধ্যে দেখার জন্য বিমানের পাইলট ও জাহাজের চালকগণ নিয়ন আলোক সংকেত ব্যবহার করেন ।
৪. বিমানবন্দরে নিয়ন বাতি ব্যবহৃত হয়।
৫. টিউব লাইটে ব্যবহৃত হয়।

আর্গন:
১. বৈদ্যুতিক বাল্বে ব্যবহৃত হয়। এতে উচ্চতাপে বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট এর জারণ বন্ধ হয়। তাছাড়া বেশি নিষ্ক্রিয় এবং বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা কম বলে নাইট্রোজেনের পরিবর্তে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ক্রিপ্টন: বৈদ্যুতিক গ্যাস বাল্বে ব্যবহৃত হয়।

জেনন: ফটোগ্রাফিক ফ্লাশ লাইট এ ব্যবহৃত হয়।

রেডন : ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি তে ব্যবহৃত হয় ।

Noble metal কোনগুলো? রসায়ন Noble metal বলতে রুথেনিয়াম (Ru), রডিয়াম (Rh), প্লাটিয়াম (Pt), সিলভার (Ag), ওসমিয়াম (Os), প্লাটিনাম (Pt), ইরিডিয়াম (hr), গোল্ড (Au) ইত্যাদি।

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...