Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

আলোর বিচ্ছুরণ ও বিক্ষেপণ

আলোর বিচ্ছুরণ হল প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা আলোর একটি রশ্মিকে তার উপাদেয় রঙে বিভক্ত করা ঘটনা । এই ঘটনা ১৬৬৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন পরীক্ষার সাহায্যে আবিষ্কার করেন । মূলত আলোর সাতটি রঙের বিশ্লেষণই আলোর বিচ্ছুরণের আলোচনার পরিধি । অন্যদিকে আলোর বিক্ষেপণ হল কোন মাধ্যমে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে আলোর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা । যে রঙের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি সে আলো ততবেশি দূর থেকে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় । নীল আলোর বিক্ষেপণ বা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বেশি বলেই আকাশ নীল দেখায় । এই টিউটরিয়ালে আলোর বিচ্ছুরণ ও বিক্ষেপণ সংক্রান্ত সবকিছুই আলোচনা করা হবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রিজম কাকে বলে

আলোর বিচ্ছুরণ সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদের প্রিজম সম্পর্কে জানতে হবে । দুইটি হেলানো সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলা হয়। এতে ৬টি আয়তক্ষেত্রিক তল অথবা তিনটি আয়তক্ষেত্রিক তল এবং দুটি ত্রিভুজাকৃতি তল থাকে । এ কারণে প্রিজম কয়েক ধরনের হতে পারে যেমন - নিয়মিত প্রিজম , অনিয়মিত প্রিজম , খাড়া প্রিজম এবং হেলানো প্রিজম । তবে আলোকবিজ্ঞানে প্রিজম হলো একটি প্রিজম আকৃতির স্বচ্ছ বস্তু যার মধ্য দিয়ে সাদা আলোকরশ্মি যাওয়ার সময় সাতটি রং এ বিভক্ত হয়ে যায়।

প্রিজম

আলোর বিচ্ছুরণ কাকে বলে

কোন মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলো থেকে মূল বর্ণের আলো পাওয়ার পদ্ধতিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। ১৬৬৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন পরীক্ষার সাহায্যে আলোর বিচ্ছুরণ আবিষ্কার করেন। প্রিজমে সাদা আলো পতিত হলে তা সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়, এটাই আলোর বিচ্ছুরণ। সাতটি বর্ণের এ বিশ্লেষণকে বিজ্ঞানী নিউটন বর্ণালী আখ্যা দেন। বিশ্লিষ্ট সাতটি বর্ণ হল বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এদেরকে সংক্ষেপে 'বেনীআসহকলা' বা VIBGYOR বলা হয়। বর্ণালীর প্রান্তদ্বয়ের বর্ণ হল বেগুনী ও লাল। বর্ণালীতে বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং বিচ্যুতি বা বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি। আবার লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম। হলুদ রঙের আলোর বিচ্যুতি লাল ও বেগুনি আলোর মাঝামাঝি বলে এর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতি বলে এবং হলুদ রশ্মিকে মধ্যরশ্মি বলে।

বৰ্ণালী

প্রিজম থেকে নির্গত রশ্মিগুলোকে যদি কোন পর্দার উপর ফেলা হয় তাহলে পর্দায় সাতটি রঙের পট্টি দেখা যায়। আলোর এই রঙিন পট্টিকে বর্ণালী বলে । বর্ণালীতে যে সাতটি রঙ দেখা যায় তাদের ক্রম হলঃ বেগুনি (Violet), নীল (Indigo), আসমানী (Blue), সবুজ (Green), হলুদ (Yellow), কমলা (Orange) এবং লাল (Red)। রঙগুলোর নাম ও ক্রম সহজে মনে রাখার জন্য এদের নামের আদ্যাক্ষরগুলো নিয়ে ইংরেজীতে VIBGYOR ও বাংলায় বেনীআসহকলা শব্দ গঠন করা হয়।

তথ্য কণিকা :
বর্ণালী আবিষ্কার করেন নিউটন।
বর্ণালীতে বেগুনি বর্ণের আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি।
বর্ণালীতে লাল বর্ণের আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে কম।
বর্ণালীতে হলুদরশ্মিকে মধ্যরশ্মি বলা হয় কারণ হলুদ বর্ণের আলোর বিচ্যুতি লাল ও বেগুনি আলোর মাঝামাঝি। হলুদ বর্ণের আলোর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতিও বলা হয়।
বিভিন্ন বর্ণের আলোর জন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্কের বিভিন্নতার জন্য বর্ণালী উৎপন্ন হয়।

লাল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং বিচ্যুতি সবচেয়ে কম
বেগুনি আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি

রংধনু

রংধনু বা রামধনু হল আলোক বিচ্ছুরণের একটি প্রাকৃতিক উদাহরণ। বৃষ্টির ফোটায় সূর্যের আলো পড়লে বৃষ্টির ফোঁটা প্রিজমের ন্যায় কাজ করে এবং সূর্যের সাদা আলো বিশ্লিষ্ট হয়ে সূর্যের বিপরীত দিকে আকাশে উজ্জ্বল বর্ণের কার্ভ বা অর্ধবৃত্ত তৈরি করে। একে রংধনু বা রামধনু বলে। রংধনুর জন্য প্রয়োজন সদ্য বৃষ্টিস্নাত বায়ুমণ্ডল , সূর্যের আলো এবং পরিষ্কার আকাশ। বৃষ্টির কণার মধ্য দিয়ে আলো গমন করলে এর মধ্য দিয়ে প্রিজমের ন্যায় আলো প্রতিসরিত সাতটি রঙের রংধনু তৈরি হয়। এ রংগুলোর ক্রম হল - বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। রংধনু একটি আলোকীয় ঘটনা, বর্তুলাকার বৃষ্টির ফোটার উপর সূর্যের আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ থেকে এর উৎপত্তি। একজন দর্শক সূর্যের দিকে পিছন ফিরে এবং বৃষ্টির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আকাশের গায়ে যদি একটি বৃত্তচাপ কল্পনা করে যার অবস্থিত পানি কণাগুলো দ্বারা প্রতিসৃত আলোকরশ্মি ১৩৮° বিচ্যুতি কোনে তার চোখে প্রবেশ করে তাহলে ঐ পানি বিন্দুগুলো তার কাছে লাল বলে মনে হবে এবং তিনি লাল বর্ণের ধনুকের মত বাঁকানো বৃত্তাংশ দেখতে পাবেন। তেমনি যদি আর একটি বৃত্তচাপ কল্পনা করা যায় যার উপর অবস্থিত পানি কণাগুলো দ্বারা সূর্যরশ্মি ১৪০° বিচ্যুতি কোণে দর্শকের চোখে পৌঁছে তবে দর্শক বৃত্তাংশকে বেগুনি রঙে দেখতে পাবেন। মধ্যস্থ অন্যান্য বর্ণের আলোক রশ্মিগুলোও এদের মধ্যে স্ব স্ব বর্ণের বৃত্তাংশ গঠন করবে। এভাবে যে রংধনু সৃষ্টি হয় তাকে প্রাথমিক বা মুখ্য রংধনু বলে।

তথ্য কণিকা :
রঙধনু একটি আলোকীয় ঘটনা। এক পশলা বৃষ্টির পর আবার যখন সূর্য ওঠে তখন কখনও কখনও সুর্যের বিপরীত দিকে আকাশে উজ্জ্বল রঙের অর্ধবৃত্ত দেখা যায় একে বলা হয় রঙধনু বা রামধনু।
রঙধনুতে সাতটি রঙ থাকে। (বর্ণালীর সাতটি রঙ)
আকাশে রংধনু সৃষ্টির কারণ: বৃষ্টির কণায় সূর্যের আলোর প্রতিফলন ও প্রতিরসণ থেকে এর উৎপত্তি ৷
রংধনু সৃষ্টির বেলায় পানির কণাগুলো প্রিজমের মত কাজ করে ।
আকাশে সূর্য যে পাশে থাকে রঙধনু তার বিপরীত দিকে দেখা যায়। তাই সকালে পশ্চিমাকাশে রংধনু দেখা যায় । বিকালে সূর্য পশ্চিমাকাশে থাকে - তাই বিকালে রঙধনু দেখা যায় পূর্বাকাশে।
সমুদ্রের ফেনা সাদা দেখায়: সমুদ্রের ঢেউয়ের ফেনা অসংখ্য জলকণার সমষ্টি। আলোকরশ্মি পানির কণাসমূহের উপর পড়লে পানির কণা প্রিজমের কাজ করে । ফলে সূর্যরশ্মি পানিকণায় বিচ্ছুরিত হয়ে বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়। পানিকণাগুলো যেহেতু অত্যন্ত কাছাকাছি থাকে, তাই বিশ্লিষ্ট বর্ণগুলো আবার একত্রে মিশে সাদা দেখায়।

রংধনু

মৌলিক রং

আসলে মৌলিক রং কয়টি ? উত্তর হচ্ছে তিনটি । এমন তিনটি রং আছে যাদেরকে পরিমাণ মতো মিশিয়ে অপর যে কোন রং তৈরি করা যেতে পারে। এই তিনটি রং হচ্ছে; লাল, সবুজ, ও নীল (আসমানী) । এদেরকে মৌলিক রং বলে। অথবা যে সকল বর্ণ বা রং অন্য কোন রং বা বর্ণের সমন্বয়ে তৈরি করা যায় না তাদেরকে মৌলিক রং বা বর্ণ বলে।
মনে রাখার সহজ উপায়ঃ ‘আসল’ রং-------------- আ = আসমানী, স = সবুজ, ল = লাল ।

দৃশ্যমান বৰ্ণালীর সীমা প্ৰায় ৩৯০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার। একে দৃশ্যমান আলো বলা হয়। অর্থাৎ আমরা যে বর্ণ বা রংগুলো দেখতে পাই তা ৩৯০ ন্যানোমিটার থেকে ৭০০ ন্যানোমিটারের মধ্যে থাকে । এর বাইরে হলে আমরা কোন কিছু দেখতে পারি না ।

দৃশ্যমান আলোর নানা রং
রংতরঙ্গদৈর্ঘ্য (ন্যানোমিটার)কম্পাঙ্ক (টেরাহার্জ)
লাল~ ৭০০–৬৩৫~ ৪৩০–৪৮০
কমলা~ ৬৩৫–৫৯০~ ৪৮০–৫১০
হলুদ~ ৫৯০–৫৬০~ ৫১০–৫৪০
সবুজ~ ৫৬০–৪৯০~ ৫৪০–৬১০
আসমানী~ ৫৬০–৪৯০~ ৫৪০–৬১০
নীল~ ৪৯০–৪৫০~ ৬১০–৬৭০
বেগুনী~ ৪৫০–৪০০~ ৬৭০–৭৫০

মৌলিক রংগুলোর সমন্বয়ে যে রংগুলো তৈরি করা যায়:
আসমানী + সবুজ = ময়ূরকণ্ঠী নীল
আসমানী + লাল = ম্যাজেন্টা
সবুজ + লাল = হলুদ
আসমানী + হলুদ = সাদা
ম্যাজেন্টা + সবুজ = সাদা
ময়ূরকণ্ঠী নীল + লাল = সাদা
লাল+ সবুজ + আসমানী = সাদা।

রঙিন টেলিভিশন যে মৌলিক রং ব্যবহৃত হয়: রঙিন টেলিভিশনে তিনটি মৌলিক রঙের জন্য তিনটি পৃথক পৃথক ইলেকট্রন টিউব থাকে। এই তিনটি মৌলিক রং হল লাল, নীল ও সবুজ।

আলোর শোষণ, প্রতিফলন ও বস্তুর বর্ণ

কোন বস্তুর উপর আপতিত আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসলে সে বস্তুটি আমরা দেখতে পাই । প্রতিফলিত আলোর যে বর্ণ থাকে বস্তুটিকেও আমরা সেই বর্ণের দেখি। নির্দিষ্ট রঙের বস্তু নিজের রঙ ছাড়া অন্য সকল রঙ শোষণ করে এবং নিজের রঙকে প্রতিফলিত করে। তাই বস্তুটিকে তার নিজের রঙে দেখা যায়।

কোন বস্তু যখন সমস্ত আলো শোষণ করে তখন বস্তুটিকে কালো কেমন দেখায় ৷
কোন বস্তু যখন কোন আলো শোষণ না করে সমস্ত আলোই প্রতিফলিত করে তখন বস্তুটিকে সাদা দেখায়।
বরফ সাদা দেখায় কারণ, কোন আলো শোষণ না করে সমস্ত আলোই প্রতিফলিত করে ।
সিনেমার পর্দা সাদা হয়: পর্দা সাদা হলে সাদা বর্ণ অন্য কোন বর্ণের আলোকরশ্মি শোষণ না করে প্রতিফলিত করে দেয়। ফলে সিনেমার ঔজ্জ্বল্য কমে না এবং রং এর পরিবর্তন হয় না। এতে দর্শক স্পষ্ট ছবি দেখতে পায় ।
ক্যামেরা, দূরবীন ইত্যাদি আলোক যন্ত্রের ভেতরের অংশ কালো করা হয়। কালো বস্তুর উপর আলো পড়লে আলো প্রতিফলিত হতে পারে না।
কোন লাল কাপড়কে আমরা লাল দেখি: কোন লাল রঙের কাপড়ে যখন আলো পড়ে, কাপড়টি তখন লাল রঙ ছাড়া সাদা আলোর অন্য রঙ শোষণ করে নেয়। কাপড়টি স্বচ্ছ না থাকায় লাল রঙ কাপড়ের মধ্য দিয়ে গমন করতে পারেনা, লাল রঙ কাপড় থেকে প্রতিফলিত হয়। এজন্যই কাপড়টিকে আমরা লাল দেখি ।
দিনের বেলায় সূর্যালোকে গাছের পাতা সবুজ দেখায়: দিনে গাছের পাতার ক্লোরোফিল সূর্যালোকের সবুজ বাদে সাতটি বর্ণের সবকটিকেই শোষণ করে। ফলে শুধুমাত্র সবুজ আলো প্রতিফলিত হয়। এজন্য দিনের বেলায় সূর্যালোকে গাছের পাতা সবুজ দেখায় ।
লাল আলোতে গাছের সবুজ পাতা কালো দেখায় কারণ সবুজ পাতা লাল আলোক শোষণ করে নেয় বলে কোন আলোই আর প্রতিফলিত হয় না।
লাল আলোতে সবুজ ফুল/সবুজ রঙের জামার রঙ কালো দেখায় ।
লাল আলোতে নীল রঙের ফুল কালো দেখায়। কারণ নীল রঙের ফুল লাল আলোক শোষণ করে নেয় বলে কোন আলোই আর প্রতিফলিত হয় না।
লাল আলোতে লাল রঙের (জবা) ফুল লাল দেখায়। কারণ লাল রঙের ফুল লাল আলোক শোষণ না করে প্রতিফলিত করে।
নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে সাদা ফুল নীল দেখায়: একটি সাদা ফুল সূর্যের সাতটি আলোই প্রতিফলিত করে বলে তা সাদা দেখায়। সাদা ফুল থেকে প্রতিফলিত আলোক রশ্মি যখন নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে আসে তখন ঐ কাঁচ নীল বাদে অন্য সব বর্ণের আলো শোষণ করে নেয় তাই আমাদের চোখে শুধু নীল আলো পৌঁছে। ফলে ফুলটি নীল দেখায় ।
নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে হলুদ ফুল কালো দেখায়: হলুদ ফুল শুধু হলুদ বর্ণের আলো প্রতিফলিত করে বলে তা হলুদ দেখায়। কিন্তু হলুদ বর্ণের আলোক নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে আসার সময় শোষিত হয় তাই হলুদ ফুলকে নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে দেখলে কালো দেখায় ।

আলোর বিক্ষেপণ কাকে বলে

যখন কোন আলোক তরঙ্গ কোন ক্ষুদ্র কণিকার উপর পড়ে, তখন কণিকাগুলো আলোক তরঙ্গকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেয়। একে বলা হয় আলোর বিক্ষেপণ । কোন আলোর কী পরিমাপ বিক্ষেপণ ঘটে তা নির্ভর করে এর রঙ বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপর। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম হবে তার বিক্ষেপণ তত বেশি হবে। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হলে তার বিক্ষেপণ তত কম। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি বলে এটি অধিক দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। তাই বিপদ সংকেতের জন্য, ট্রাফিক লাইটে লাল আলো ব্যবহার করা হয়। আমাদের দর্শন ক্ষমতা মধ্যবর্তী আলোতে সর্বাধিক অর্থাৎ হলুদ-সবুজ আলোতে সর্বাধিক এবং লাল আলোতে সবচেয়ে কম।

আলোর বিক্ষেপণের তথ্য কণিকা / উদাহরণ

লাল বর্ণের আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম ।
বেগুনি বর্ণের আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি ।
লাল আলো বেশি দূর থেকে দেখা যায় কারণ লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় কম বিক্ষেপিত হয়।
বিপদ সংকেতের জন্যে সর্বদা লাল আলো ব্যবহার করার কারণ , লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সর্বাধিক বলে অনেক দূর থেকে দেখা যায় ।
সূর্যোদয় বা সূর্যোস্তের সময় সূর্য লাল দেখায় কেন : সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় সূর্য প্রায় দিগন্তরেখার খুব কাছাকাছি থাকে। এ সময় সূর্যের আলো আমাদের চোখে পৃথিবীর পুরু বায়ুস্তর ভেদ করে আসে। ফলে রশ্মি বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণা, পানিকণা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বেগুনি, নীল, আসমানি প্রভৃতি বর্ণের বিক্ষেপণ বেশি ঘটে। কিন্তু লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি বলে এর বিক্ষেপণ কম হওয়ায় এটি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসে। তাই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্য লাল দেখায়।
দুপুরবেলা সূর্যকে হলদে দেখায় কেন : তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম বলে বর্ণালীতে বেগুনি, নীল ও আসমানি বর্ণ অধিক বিক্ষিপ্ত হয়। নীল বর্ণ মাঝামাঝি থাকায় এর অধিক বিক্ষেপণ ঘটে। তাই দিনের বেলায় আকাশ নীল দেখায়। নীল ব্যতীত সূর্যালোকের অবশিষ্ট বর্ণগুলোর সংমিশ্রণে হলুদ বর্ণ সৃষ্টি হয় বলে সূর্য হলুদ দেখায়।
আকাশ নীল দেখায় কেন : সূর্যের সাদা আলো বিচ্ছুরিত হলে সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়। এ বর্ণগুলো হলো বেগুনি, নীল, আসমানী, হলুদ, সবুজ, কমলা ও লাল। বর্ণালী হতে দেখা যায় যে, লাল আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম এবং বেগুনি আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি। প্রকৃত অর্থে যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম সে আলোর বিক্ষেপণ বেশি। সূর্যরশ্মি বায়ুমণ্ডলের সূক্ষ্ম ধূলিকণা এবং বিভিন্ন গ্যাস-অণুতে বিশ্লিষ্ট হয়। এক্ষেত্রে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বেগুনি, নীল ও আসমানি আলোর বিক্ষেপণ অধিক হয়। নীল আলোর বিচ্যুতি লাল এবং বেগুনি আলোর বিচ্যুতির মাঝামাঝি বলে নীল আলো মধ্যরশ্মি হিসেবে আপতিত হয় এবং আকাশে নীল আলোর প্রাচুর্য ঘটে। ফলে আকাশ নীল দেখায়।
মেঘ সাদা দেখায় কেন : যেসব ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প মেঘ তৈরি করে তারা বায়ুর অণু থেকে অনেক বড়। এরা নীল আলোকেই শুধু বিক্ষেপ করে না, এদের দ্বারা সকল রঙের আলো সমানভাবে বিক্ষিপ্ত হয়। তাই মেঘ হয় সাদা ।
বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশের রঙ কেমন দেখাত: বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ অন্ধকার বা কালো দেখাত কারণ সেক্ষেত্রে আলোক রশ্মির বিক্ষেপণ হত না ।
দিনের বেলায় চাঁদকে সাদা দেখায় কেন : দিনের বেলায় আকাশ কর্তৃক বিক্ষিপ্ত হালকা নীল আলো চাঁদের নিজস্ব হলুদ রঙের সাথে মিশে যায়। এ দুইটি বর্ণের মিশ্রণের ফলে চোখে চাঁদকে সাদা বলে মনে হয়।
সূর্যাস্তের পরে চাঁদকে হলদে দেখায় কেন : সূর্যাস্তের পর আকাশের হালকা নীল বর্ণ লোপ পায় বলে চাঁদকে হলদে মনে হয়।'
দিনের বেলায় চাঁদকে পুরো সাদা দেখালেও সূর্যাস্তের পর হলদে দেখায় কেন : দিনের বেলায় আকাশ কর্তৃক বিক্ষিপ্ত হালকা নীল আলো চাঁদের নিজস্ব হলুদ রঙের সাথে মিশে যায়। এ দুটি বর্ণের মিশ্রণের ফলে চোখে চাঁদকে সাদা বলে মনে হয়। কিন্তু সূর্যাস্তের পর আকাশের হালকা নীল বর্ণ লোপ পায় বলে চাঁদকে হলদে মনে হয়।
চাঁদ থেকে আকাশের রঙ কেমন দেখায়? চাঁদ থেকে আকাশের রঙ কালো দেখায়। চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, কোনো ধূলিকণা চাঁদের আকাশে ভেসে বেড়ায় না। ফলে সূর্যের আলোকরশ্মি চাঁদে পতিত হওয়ার সময় আকাশে বিক্ষিপ্ত হতে পারে না এবং কোন বিক্ষিপ্ত রশ্মি চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে না। তাই চাঁদের থেকে আকাশের রঙ কুচকুচে কালো দেখায় ৷
সিনেমার পর্দা সাদা এবং অমসৃণ হয় কেন : সিনেমার পর্দা সাদা ও অমসৃণ হয় । কারণ, পর্দা অমসৃণ হলে এর উপর আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। পর্দা থেকে বিক্ষিপ্ত আলোকরশ্মিগুলো সিনেমা হলের অভ্যন্তরে চারদিকে ছড়িয়ে প্রতিটি দর্শকের চোখে পড়ে। পর্দা সাদা হলে সাদা বর্ণ অন্য কোন বর্ণের আলোকরশ্মি শোষণ না করে প্রতিফলিত করে দেয় । ফলে সিনেমার ঔজ্জ্বল্য কমে না এবং রং এর পরিবর্তন হয় না। এতে দর্শক স্পষ্ট ছবি দেখতে পায় । পর্দা চকচকে এবং মসৃণ হলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন হতো, ফলে পর্দায় আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে নির্দিষ্ট দিকে চলে যেতো। ঐ রশ্মিগুলো যাদের চোখে পড়ত কেবল তারা পর্দাকে চকচকে দেখতো আর অন্যান্য দর্শক পর্দায় কোন ছবি দেখতে পেতো না।
সূর্যোদয়ের আগে বা সূর্যোদয়ের পরে কিছুক্ষণ সূর্যকে দেখা যায় কেন : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব তত কমতে থাকে । সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মি হালকা থেকে ঘন মাধ্যমে গমন করে এবং প্রতিসরণের পর ক্রমশ অভিলম্বের দিকে সরে আসে। কাজেই আলোকরশ্মি যখন আমাদের চোখে এসে পৌঁছে, তখন সূর্যকে তার অবস্থানের পরিবর্তে দিগন্তরেখার উপরের স্থানে দেখা যায় । তাই সূর্যোদয়ের আগে বা সূর্যোদয়ের পরে কিছুক্ষণ সূর্যকে দেখা যায় ।

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...