Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদন

উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে এবং সেই পানি ও রস কান্ডের ভিতর দিয়ে পাতায় পৌঁছায়। আবার দেহে শোষিত পানি উদ্ভিদ বাষ্প আকারে দেহ থেকে বের করে দেয়। উদ্ভিদ যে প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে, দেহে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে ঐ রস দেহের নানা অঙ্গে পরিবহন করে ও দেহ থেকে পানি বাষ্প আকারে বের করে দেয় সেই সব প্রক্রিয়া ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদনের মাধ্যমে ঘটে।
ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদন

ব্যাপন

আমরা জানি সব পদার্থই কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু দিয়ে তৈরি। এ অণুগুলো সবসময় গতিশীল বা চলমান অবস্থায় থাকে। তরল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলোর চলন দ্রুত হয় এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না অণুগুলোর ঘনত্ব দুই স্থানে সমান হয়। অণুগুলোর এরূপ চলন প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপনকারী পদার্থের অণু-পরমাণুগুলোর গতিশক্তির প্রভাবে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে অধিক ঘনত্বযুক্ত স্থান থেকে কম ঘনত্বযুক্ত স্থানে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রকার চাপকে ব্যাপন চাপ বলে। কোনো পদার্থের অণুর ব্যাপন ততক্ষণ চলতে থাকে যতক্ষণ না উক্ত পদার্থের অণুগুলোর ঘনত্ব সর্বত্র সমান হয়। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই পদার্থের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায়। যেমন- ঘরে সেন্ট বা আতর ছড়ালে বা ধূপ জ্বালালে সমস্ত ঘরে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপনের কারণে ঘটে। ধূপের ধোঁয়া ও সেন্টের অণুগুলো অধিক ঘনত্ব সম্পন্ন হওয়ায় সম্পূর্ণ ঘরে কম ঘনত্ব সম্পন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত ঘর সুবাসে ভরে যায়।

উদ্ভিদের বায়বীয় অংশ হতে পানি হারানোর জন্য ব্যাপন দায়ী। বায়ুমন্ডলের চাপ, মাধ্যমের ঘনত্ব, তাপমাত্রা ইত্যাদি ব্যাপনের গতিনিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

ব্যাপনের গুরুত্ব: জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাপন প্রক্রিয়া ঘটে। যেমন- উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই অত্যাবশ্যক কাজ ব্যাপন দ্বারা সম্ভব হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ জারণের জন্য অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যায়। উদ্ভিদ দেহে শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। প্রাণীদের শ্বসনের সময় অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের আদান-প্রদান ও রক্ত থেকে পুষ্টি উপাদান, অক্সিজেন প্রভৃতি লসিকায় বহন ও লসিকা থেকে কোষে পরিবহন করা ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়।

অভিস্রবণ

অভিস্রবণ প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়ের ধারণা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ট দুইটি দ্রবণের মধ্যে অবস্থিত পর্দার বৈশিষ্ট্য জানা। পর্দাকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, অভেদ্য পর্দা, ভেদ্য পর্দা ও অর্ধভেদ্য পর্দা।
অভেদ্য পর্দা: যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না তাকে অভেদ্য পর্দা বলে। আরো সহজ ভাষায় বললে , যে পর্দা দিয়ে পর্দা ভেদ করে কোন কিছু আসা এবং যাওয়া সম্ভব হয় না তাকে ভেদ্য পর্দা বলে । যেমন- পলিথিন, কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীর।
ভেদ্য পর্দা: যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয়েরই অণু সহজে চলাচল করতে পারে তাকে ভেদ্য পর্দা বলে। অর্থাৎ যে পর্দা ভেদ করে সহজেই কোন কিছু যাওয়া এবং আসা সম্ভব হয় তাকে ভেদ্য পর্দা বলে । যেমন- কোষপ্রাচীর।
অর্ধভেদ্য পর্দা: যে পর্দা দিয়ে কেবল দ্রবণের দ্রাবক অণু (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রাব অণু চলাচল করতে পারে না তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। অর্থাৎ যে পর্দা ভেদ করে কোন কিছু প্রবেশ করতে পারে কিন্তু আর ফেরত আসতে পারে না তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে । যেমন- কোষপর্দা, ডিমের খোসার ভিতরের পর্দা, মাছের পটকার পর্দা ইত্যাদি।

যদি একটা শুকনা কিশমিশকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখি তাহলে সেটি ফুলে উঠে। এটি কিশমিশ দ্বারা পানি শোষণের কারণে ঘটে এবং পানি শোষণ অভিস্রবণ দ্বারা ঘটে। অভিস্রবণও এক প্রকার ব্যাপন। অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে এবং একটি অর্ধভেদ্য পর্দা অভিস্রবণের সময় দুটি তরলকে পৃথক করে রাখে। আরো সহজ করে বললে , কিশমিশের ভেতর অর্ধভেদ্য পর্দা ভেদ করে পানি প্রবেশ করেছে ঠিকই কিন্তু সেই পানি আর কিশমিশ থেকে বের হতে পারে না । এটাই মূলত অভিস্রবণ ।

যে প্রক্রিয়ায় একই পদার্থের কম ঘনত্ব এবং বেশি ঘনত্বের দুটি দ্রবণ অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করা হলে দ্রাবক পদার্থের অণুগুলো কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিকে যায় তাকে অভিস্রবণ বা অসমোসিস বলে ।

অভিস্রবণের গুরুত্ব : জীবকোষের কোষাবরণ বা প্লাজমা পর্দা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে। প্লাজমা পর্দা দিয়ে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মাটিস্থ পানি মূলরোমের মধ্যে প্রবেশ করে এবং মূলরোম থেকে উদ্ভিদের সম্পূর্ণ অংশে প্রবাহিত হয় । এতে কোষস্থিত পানি খনিজ লবণকে দ্রবীভূত করে কোষ রসে পরিণত হয়। সুতরাং কোষের মধ্যে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখার জন্য অভিস্রবণের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ কোষের রসস্ফীতি ঘটে। কান্ড ও পাতাকে সতেজ এবং খাড়া রাখতে সাহায্য করে। ফুলের পাপড়ি বন্ধ বা খুলতে পারে। তাছাড়া প্রাণীর অন্ত্রে খাদ্য শোষিত হতে পারে।

উদ্ভিদের পানি ও খনিজ লবণ শোষণ

উদ্ভিদের পানি শোষণ পদ্ধতি: মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ উদ্ভিদ দেহের সজীব কোষে টেনে নেওয়ার পদ্ধতিকে সাধারণভাবে শোষণ বলা যেতে পারে। স্থলে বসবাসকারী উদ্ভিদগুলো মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদ সারাদেহ দিয়ে পানি শোষণ করে। স্থলজ উদ্ভিদগুলোর মূলরোম মাটির সুক্ষ্নকণার ফাঁকে লেগে থাকা কৈশিক পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় নিজ দেহে টেনে নেয়।

মূলরোমের প্রাচীরটি ভেদ্য, তাই প্রথমে ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে এবং কোষপ্রাচীরের নিচে অবস্থিত অর্ধভেদ্য প্লাজমা পর্দার সংস্পর্শে আসে। মূলরোমের কোষীয় দ্রবণের ঘনত্বের তুলনায় তার পরিবেশের দ্রবণের ঘনত্ব কম থাকায় পানি (দ্রাবক) কোষের মধ্যে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। মূলের বাইরের আবরণ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব কোষের কোষ রসের ঘনত্ব সমান নয়। ফলে কোষান্তর অভিস্রবণের কারণে মূলের এক কোষ থেকে অন্য কোষে পানির গতি অব্যাহত থাকে এবং পরিশেষে পানি কান্ডের জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতায় পৌঁছায়।

ইমবাইবিশন: অধিকাংশ কলয়েডধর্মী পদার্থই পানিগ্রাহী। উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন ধরনের কলয়েডধর্মী পদার্থ বিদ্যমান। যথা- স্টার্চ, সেলুলোজ, জিলেটিন ইত্যাদি। এসব পদার্থ তাদের কলয়েডধর্মী গুণের জন্যই পানি শোষণ করতে সক্ষম। কলয়েডধর্মী বিভিন্ন পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীর) যে প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের তরল পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) শোষণ করে তাকে ইমবাইবিশন বলে।

কলয়েডধর্মী পদার্থ : যেসব পদার্থের পানি শোষণ ক্ষমতা আছে তাদেরকে কলয়েডধর্মী পদার্থ বলে। কলয়েড পদার্থ পানিগ্রাহী। স্টার্চ, সেলুলোজ, জিলেটিন ইত্যাদি পানি শোষণ করতে পারে। এ কারণে স্টার্চ, সেলুলোজ, জিলেটিনকে কলয়েডধর্মী পদার্থ বলে।

উদ্ভিদের খনিজ লবণ শোষণ পদ্ধতি : উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কতগুলো খনিজ লবণের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের উৎস মাটিস্থ পানি। মাটিস্থ পানিতে খনিজ লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। খনিজ লবণগুলো মাটিস্থ পানিতে দ্রবীভূত থাকলেও পানি শোষণের সঙ্গে উদ্ভিদের লবণ শোষণের কোনো সম্পর্ক নেই, দুটি প্রক্রিয়াই ভিন্নধর্মী। উদ্ভিদ কখনো লবণের সম্পূর্ণ অণুকে শোষণ করতে পারে না। লবণগুলো কেবল আয়ন হিসেবে শোষিত হয়। উদ্ভিদ মাটির রস থেকে খনিজ লবণ শোষণ দুইভাবে সম্পন্ন করে। যথা- ১. নিষ্ক্রিয় শোষণ; ২. সক্রিয় শোষণ।

প্রস্বেদন

প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন উদ্ভিদের একটি বিশেষ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আমরা জানি , উদ্ভিদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য পানি অপরিহার্য। তাই উদ্ভিদ মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। শোষিত পানির কিছু অংশ উদ্ভিদ তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহার করে এবং বাকি অংশ বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পরিত্যাগ করে। উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানির এই নির্গমনের প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে।

প্রস্বেদন প্রধানত পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে হয়। এছাড়া কান্ড ও পাতার কিউটিক্স এবং কান্ডের ত্বকে অবস্থিত লেন্টিসেল নামক এক বিশেষ ধরনের অঙ্গের মাধ্যমেও অল্প পরিমাণ প্রস্বেদন হয়। প্রস্বেদন কোথায় সংঘটিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে প্রস্বেদন তিন প্রকার যথা- ১. পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন , ২. ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন এবং ৩. লেন্টিকুলার প্রস্বেদন। সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পত্ররন্ধ্র এবং খালি চোখে কান্ডের লেন্টিসেল সহজে দেখা যায়।

পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন : পাতায় , কচিকাণ্ডে , ফুলের বৃতি ও পাপড়িতে দুটি রক্ষীকোষ ( Guard cell ) বেষ্টিত এক ধরনের রন্ধ্র থাকে । এদেরকে পত্ররন্ধ্র ( একবচন stoma , বহুবচন stomata ) বলে । এই পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদনকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে। কোনো উদ্ভিদের মোট প্রস্বেদনের 90-95 % হয় পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে ।

কিউটিকুলার প্রস্বেদন: কচি কাণ্ড ও পাতায় কিউটিন আস্তরন থাকে। কিউটিনযুক্ত এ আস্তরণকে কিউটিকল বলে। কিউটিকলের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদনকে কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে।

লেন্টিকুলার প্রস্বেদন: উদ্ভিদের পরিণত কাণ্ডে সেকেন্ডারী বৃদ্ধির ফলে স্থানে স্থানে ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। এ ছিদ্রকে বলে লেন্টিসেল। লেন্টিসেলের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদনকে বলা হয় লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।

  • কোন ধরনের প্রস্বেদন বেশি হয়: পত্ররন্ধ্রীয় (৯০-৯৫%)।
  • প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতার কোন অংশে বায়ু পানির সাথে মিশে: নিম্নবহিঃত্বকে।
  • সূর্যের প্রখর তাপেও গাছের পাতা গরম হয় না কেন: প্রস্বেদনের জন্য।
  • পত্ররন্ধ্র খোলা বা বন্ধ হয় কি দিয়ে: রক্ষীকোষ দিয়ে।
  • প্রস্বেদন কখন হয়: দিনে।
  • পত্ররন্ধ্র কোন সময় খোলা ও বন্ধ থাকে: দিনের আলোতে খোলা থাকে, রাতে বন্ধ থাকে।
  • বড় গাছের নিচে ঠাণ্ডা লাগে কেন: প্রস্বেদনের জন্য।
  • প্রস্বেদন পরিমাপ করা হয়: পটোমিটার যন্ত্র দিয়ে।
  • শীতকালে প্রস্বেদন কম হয় কেন: পাতা ঝরে যায়।
  • আলোর সাথে প্রস্বেদনের সম্পর্ক: আলো থাকলে সালোক সংশ্লেষণ বেশি হয় বলে প্রস্বেদনও বেশি হয়।
  • প্রস্বেদনের উপর বায়ুর আর্দ্রতা প্রভাব: বায়ুর আর্দ্রতা কম হলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে প্রস্বেদন বেশি হয়। বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হলে প্রস্বেদন কম হয়।
  • বায়ু প্রবাহ বৃদ্ধি পাইলে → প্রস্বেদন বৃদ্ধি পায় (জলীয় বাষ্প কমে যায় বলে)
  • প্রস্বেদনের উপর বায়ুর চাপের প্রভাব: বায়ুর চাপ কম হলে কম তাপেই পানি বাষ্পে পরিণত হয় ফলে প্রস্বেদন বৃদ্ধি পায়।
  • কলার চারা লাগানোর সময় পাতা কেটে ফেলা হয় কেন: প্রস্বেদন রোধ করার জন্য।

প্রস্বেদনের গুরুত্ব : উদ্ভিদ জীবনে প্রস্বেদন একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদদেহ থেকে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। এতে উদ্ভিদের মৃত্যুও হতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে উদ্ভিদের জীবনে প্রস্বেদনকে ক্ষতিকর প্রক্রিয়া বলেই মনে হয়। এজন্য প্রস্বেদনকে বলা হয় উদ্ভিদের জন্য এটি একটি "Necessary evil", তবুও প্রস্বেদন উদ্ভিদ জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদ তার দেহ থেকে পানিকে বের করে অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্ত করে। প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি অন্তঃঅভিস্রবণের সহায়ক হয়ে উদ্ভিদকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণে সাহায্য করে। উদ্ভিদদেহকে ঠান্ডা রাখে এবং পাতার আর্দ্রতা বজায় রাখে। প্রস্বেদনের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। পাতায় প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় পানির যে টান সৃষ্টি হয় তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণ ও উদ্ভিদের শীর্ষে পরিবহনে সাহায্য করে। উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মতো পরিবেশে তেমন কোনো প্রভাব রাখে না। তবে পানিচক্রে বাষ্পীভবনে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয়বাষ্প হিসেবে বায়ুমন্ডলে প্রেরণ করতে স্থলজ উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে। প্রস্বেদনের ফলে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পৌছায়।

পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন

জামরা জেনেছি যে উদ্ভিদ মূলের মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। এই পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণকে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছানো দরকার। কারণ পাতাই প্রধানত এগুলোকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির রসদ হিসেবে ব্যবহার করে। আবার পাতায় তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ তার দেহের বিভিন্ন অংশে যথা- কান্ড ও শাখা-প্রশাখায় পাঠিয়ে দেয়। উদ্ভিদের মূলরোম দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছানো এবং পাতায় তৈরি খাদ্যবস্তু সারা দেহে ছড়িয়ে পড়াকে পরিবহন বলে। শোষণের মতো পরিবহন পদ্ধতি ও উদ্ভিদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক পরিবহন টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ভিদে পরিবহন ঘটে। জাইলেমের মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতায় যায় এবং ফ্লোয়েম দ্বারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারা দেহে পরিবাহিত হয়। সুতরাং জাইলেম ও ফ্লোয়েম হলো উদ্ভিদের পরিবহনের পথ। উদ্ভিদের পরিবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিতভাবে সম্পন্ন হয়-

উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। জাইলেমের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন হয়। ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পাতায় তৈরি খাদ্যরসের উভমুখী পরিবহন হয়। উদ্ভিদের সংবহন বা পরিবহন বলতে প্রধানত উর্ধ্বমুখী পরিবহন এবং নিম্নমুখী পরিবহনকে বোঝায়। মাটি থেকে মূলরোমের দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণ (রস) জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছায় ।

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...