Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

মশা বাহিত রোগ | Mosquito borne diseases

মশা বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। মশার কামড়ের মাধ্যমে এই জীবাণুগুলি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব রোগসমূহকে একত্রে মশা বাহিত রোগ বলা হয় । মশার দ্বারা মানুষের ডেঙ্গুজ্বর, ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে। ডেঙ্গুজ্বর হয় এডিস মশকীর দ্বারা, ফাইলেরিয়া কিউলেক্স মশকী আর ম্যালেরিয়া জ্বর হয় অ্যানোফিলিস মশকীর দ্বারা।

ডেঙ্গুজ্বর

  • ডেঙ্গুজ্বরের বাহক মশার নাম: এডিস (Aedes aegypti) নামক মশকী হচেছ ডেঙ্গুজ্বরের বাহক।
  • ডেঙ্গু রোগে রক্তের কোন কণিকা ভেঙে যায়: ডেঙ্গু রোগে রক্তের অণুচক্রিকা (Platelets) ভেঙে যায়।
  • এ রোগ যেভাবে বাহিত হয়: ডেঙ্গু ফিভার বা জ্বর এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। শারীরিক দূর্বলতা, ফুসকুড়ি ও লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া এ রোগের উপসর্গ। এডিস ইজিপটি নামক এক জাতীয় মশকী এ ভাইরাসের বাহক। এ মশকীর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এরা সাধারণত দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায়, গরম কালে শহর এলাকায় জলাবদ্ধ স্থানে এরা বংশবিস্তার করে থাকে। বিশেষ করে গরমকালেই এদের বংশবিস্তার বেশি হয়ে থাকে। এই ভাইরাসকে ডেঙ্গু ভাইরাসও বলা হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা যাদেরকে কামড়ায় তারাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে। তাছাড়াও এ মশা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানোর পরে কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তিটিও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে। তাই বলা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিটিও এ রোগ ছড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ডেঙ্গুজ্বরের প্রধান লক্ষণ:
    শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত
    প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যায়
    পেটফুলে যায় (লিভার বড় হয়ে যায়) কিংবা পানি জমে যায়
    পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা হয়
  • কি দিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায়: ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশার (Aedes aegypti ও Aedes albopictuus) মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এডিস মশা সাধারণত কোন ডেঙ্গু রোগীকে কামড়ানোর ৮-১১ দিনের মধ্যে সংক্রমণে পরিণত হয় এবং কোন সুস্থ রোগীকে দংশন করলে তার এ রোগ হয়। এডিস মশা একবার সংক্রামক হলে সারাজীবন রোগ সংক্রমণ করে যেতে পারে এবং ঐ সংক্রামক মশার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই রোগের সংক্রামক হয়েই জন্মাবে। সংক্রমিত মশার কামড়ের পর এই ভাইরাস প্রথম লসিকা গ্রন্থিতে চলে যায়। সেখানে থেকে লসিকা তন্ত্রে গিয়ে বিস্তার লাভ করে এবং রক্তে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ: হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রার (৪০০ সে.) দ্বিস্তরের (Biphsic) জ্বর হয়ে থাকে। মাংসপেশীতে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে, এ জন্য ডেঙ্গুকে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়ে থাকে। এতে খুব মাথা ব্যথা হয়। আপার রেসপিরেটরি সিস্টেম তথা হাঁচি, কাশি ইত্যাদি হতে পারে। জ্বর কয়েকদিন পর স্বল্প সময়ের বিরতিতে আবার দেখা দেয়। এই সময়ে ৩য় থেকে ৫ম দিনের মধ্যে এক ধরনের লালচে রেশ (Maculopapular) প্রথমে শরীরে, পরে হাতে- পা ও মুখে ছুড়িয়ে পড়ে। রেশ দেখা দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে জ্বর পড়তে শুরু করে এবং রোগী ক্রমে আরোগ্য লাভ করে। এ জ্বরে রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। রোগীর দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ গহ্বরের প্রাচীর দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়। এ কারণে সাধারণত রক্তের প্লাটেলেট কমে যায়।
  • ডেঙ্গু ভাইরাস: ডেঙ্গু ভাইরাস ফ্লেভিভাইরাস গ্রুপের সদস্য এক ধরনের আর.এন.এ. ভাইরাস। এ ভাইরাস চার ধরনের- Den-1, Den-2, Den-3, Den-4.

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া জীবাণু: ম্যালেরিয়ার জীবাণু আবিষ্কার করেন রোনাল্ড রস এবং কুইনাইন আবিষ্কার করেন রেডি। ম্যালেরিয়া জীবাণু হলো প্লাজমোডিডা (Plasmodida) পরিবারের স্পোরোজোয়া (Sporozoa) শ্রেণীভুক্ত হোমোপেডিয়া (Hemopurodia) প্রণপের একটি ক্ষুদ্র প্রোটজোয়া (Protozoa)। ম্যালেরিয়া জীবাণু ৪ ধরনের (ক) প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, (খ) প্লাজমোডিয়াম ফালসিপেরাম, (গ) প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরাই ও (ঘ) ওভালি। ভাইভাক্স গ্রুপের জীবাণু মানুষের দেহের লাল রক্তকণিকায় একটি গোলাকার রিং হিসেবে প্রকাশ পায় এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিপক্ক হয়ে ১৬-২৪টি জীবাণুতে বিভক্ত হয়। এরপর রক্তকণিকা ভেঙ্গে যায় এবং প্রত্যেকটি জীবাণু দেহের অন্য রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে। এ সময় রোগীর দেহে কম্পন অনুভূত হয়। মানবসমাজে ম্যালেরিয়া বিস্তারে এনোফিলিস মশকীই একমাত্র বাহক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ মশার ৩৫টি প্রজাতি রয়েছে। স্ত্রীজাতীয় এনোফিলিস মশা উর্বর ডিম প্রসব করার জন্য মানুষের রক্তের প্রয়োজন। তাই এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে মানুষের ম্যালেরিয়া রোগ হয়। অবশ্য পুরুষ মশা গাছের রস ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।

ম্যালেরিয়া জীবাণুর আক্রমণে রোগী দেহে রক্তশূন্যতা দেখা যায় নিম্নলিখিত কারণে:

  • [ক] লোহিত রক্তকণিকার ভেতর থেকে মেরোজায়াইটগুলো যখন বের হয় তখন কণিকাগুলো ধ্বংস হয়।
  • [খ] আক্রান্ত লোহিত কণিকাগুলোর প্রাচীর ভেঙ্গে গিয়ে তারা নষ্ট হয়।
  • [গ] ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর প্লীহা ফুলে যায় ও তা লাইসোলেসিথিন নামক বস্তু নিঃসৃত করে, যা লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে থাকে ।
  • [ঘ] জীবাণুগুলো 'হিমোলাইসিন' নামক বস্তু উৎপন্ন করে যা লোহিত কণিকার 'হিমোলাইসিস' ঘটায়।

সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া: সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হচ্ছে এক ধরনের ম্যালেরিয়া, যা প্লাজমোডিয়া ফ্যালসিপেরাস নামক এক ধরনের প্যারাসাইট জাতীয় জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে এবং এটি মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে। এ ম্যালেরিয়ায় মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় বলেই একে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া নামকরণ করা হয়েছে। কোনো স্ত্রী এলোফিলিস মশা যদি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে কামড় দেয় তাহলে রোগীর রক্তে অবস্থিত সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট (পরজীবী বা জীবাণু) মশার শরীরে ঢুকে পড়ে। মশার শরীরে ম্যালেরিয়ার এ জীবাণু ৭ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পরিণত হয়ে সংক্রমণযোগ্য একটা পর্যায়ে পৌছে। এ পর্যায়ে সংক্রমিত মশাটি কোনো মানুষকে কামড় দিলে মশার লালাগ্রন্থির মাধ্যমে ম্যালেরিয়া জীবাণু সেই মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে অর্থাৎ মানুষটি ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সব ধরনের ম্যালেরিয়া এভাবেই ছড়ায়।

ফাইলেরিয়া

নেমাটোড নামীয় সুতার মতো কীটের এক বা একাধিক প্রজাতির আক্রমণে ফাইলেরিয়া রোগ হয়। অনেকে মনে করেন এটা এক বিশেষ ধরনের মশা বা মাছি দ্বারা আক্রান্ত সংক্রমিত রোগ। এই রোগ হলে প্রচন্ড জ্বর ও শরীরের অংশবিশেষ ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়।

জ্বর

মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪০ F. শরীরের তাপ ৯৮.৪০ F (36.34 ০ C) থেকে বেড়ে গেলে বুঝতে হবে জ্বর। তার মানে শরীরে পাইরোজেনস উৎপন্ন হয়েছে। পাইরোজেনকে বলা হয় thermostable bacterial toxin, এর মানে জীবাণুঘটিত বিষ। এই বিষ শরীরের যেসব কলকব্জাগুলো তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে তাদেরকে বিকল করে দেয় আর তখনই জ্বর দেখা দেয়। তাই রোগ নিরূপিত না হওয়া পর্যন্ত ডাক্তারী ভাষায় জ্বরকে বলা হয় পাইরেকসিয়া।

হাইপার পাইরেক্সিয়া জ্বর: শরীরের তাপমাত্রা ১০৬০ F-এর বেশি হলে তাকে হাইপার পাইরেক্সিয়া জ্বর বলে। এটি একটি জরুরি অবস্থা যখন তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দরকার।

গরমের সময় বেশি রোদে কেউ কেউ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে কেন: তাপ সহ্য করার ক্ষমতা শেষ সীমায় পৌঁছলেই একজন লোক অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। একে বলে হিটস্ট্রোক (Heatstroke)। ঘাম প্রচন্ড গরম থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু একটানা বেশিক্ষণ গরম থাকলে ঘামার হার কমতে থাকে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে সে হার আরও কমে। আবার কোনো মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই ঘামার হার খুব কমে আসে বা একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় একেবারেই ঘাম হয় না। এ অবস্থায় হিটস্ট্রোক হতে পারে। মোটা মানুষ বা বয়স্কদের এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...