Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

চণ্ডীমঙ্গলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী

চণ্ডীমঙ্গলের কাহিনী

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে দুটি উপাখ্যান আছে-একটি ব্যাধ কালকেতুর ও অপরটি ধনপতি সদাগরের।

কালকেতু ও ফুল্লরার কাহিনী

দেবী চণ্ডীর পৃথিবীতে পূজা প্রচারের ইচ্ছার কারণে চণ্ডীর চক্রান্তে ও শিবের অভিশাপে বিনা দোষে নীলাম্বর স্বর্গচ্যুত হয়ে কালকেতু নাম নিয়ে জন্ম নিল ধর্মকেতু নামক এক ব্যাধের ঘরে। তার স্ত্রী ছায়াও ‘ফুল্লরা' নাম নিয়ে জন্ম নেয় অপর এক ব্যাধের ঘরে। এগার বছর বয়সে ফুল্লরার সাথে কালকেতুর বিয়ে হয়। দরিদ্রতাসত্ত্বেও উভয়ে সুখে দিনগুজরান করে ৷

কালকেতু ছিল দক্ষ শিকারি। তার নিক্ষিপ্ত শরে প্রতিদিন প্রাণ হারাতে লাগল বনের অসংখ্য পশুপাখি। তার ভয়ে বনের পশুরা ত্রাসে দিন কাটায়। পশুরা তাদের রক্ষার জন্য রক্ষাকর্ত্রী চণ্ডীদেবীর শরণাপন্ন হলো। একদিন দেবী চণ্ডী বনের সব পশু লুকিয়ে রাখল । ফলে শিকার না পেয়ে কালকেতু না খেয়ে থাকল। পরের দিন আবার কালকেতু শিকারে গেলে বনের সব পশু লুকিয়ে দেবী চণ্ডী একটি স্বর্ণগোধিকা বা গুঁইসাপের রুপ ধারণ করে ঝোপের পাশে রইল। চণ্ডীর মায়ায় সেদিন কালকেতু কোনো শিকার পেল না,-বিরক্ত হয়ে পথে দেখা অশুভের চিহ্ন স্বর্ণগোধিকাকে বেঁধে নিয়ে এল বাড়িতে। কোন শিকার না পেয়ে এটিকে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। স্ত্রীকে পাশের বাড়ি থেকে খুদ এনে রাঁধতে বলে কালকেতু বাজারে গেল। ফুল্লরা পাশের বাড়ি থেকে এসে দেখে, সেখানে গোধিকার পরিবর্তে এক অপরূপ সুন্দরী যুবতী বসে আছে। ফুল্লরা তাকে দেখে বিস্মিত ও-ভীত হলো, তখন তরুণী জানাল যে ব্যাধ তাকে নিয়ে এসেছে এবং সেও এই বাড়িতেই থাকবে। সপত্নী আশঙ্কায় ফুল্লরা তাকে অনেক বোঝাল চলে যেতে কিন্তু তরুণী কিছুতেই রাজি না হলে দৌড়ে বাজারে গিয়ে কালকেতুকে খবর দিল। কালকেতু বাড়ি ফিরে এসে যুবতীর পরিচয় জিজ্ঞেস করল এবং কোন উত্তর না পেয়ে যুবতীকে হত্যা করার জন্য তীর প্রস্তুত করল। তখনি দেবী চণ্ডী স্বমূর্তি ধারণ করে কালকেতুকে তার পূজা প্রচার করতে বলল। সাত ঘড়া ধন ও একটি অঙ্গুরীর বিনিময়ে কালকেতু রাজি হলো।

দেবীর পরামর্শে কালকেতু বন কেটে নগর ও রাজ্য স্থাপন করে। তার রাজ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক আসে এবং একটি আদর্শ রাজ্য হিসাবে সেটা গড়ে ওঠে। ভাঁডুদত্ত নামক একজন টাউট কালকেতুর স্বঘোষিত শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে প্রজাদের ওপর খাজনা তোলার নামে অত্যাচার শুরু করে। কালকেতু তাকে শাস্তি দিয়ে তাড়িয়ে দিলে সে পাশের কলিঙ্গ রাজ্যে যায় ও কলিঙ্গরাজাকে উসকানি দিয়ে কালকেতুর রাজ্য আক্রমণ করায়। কালকেতু পরাস্ত ও বন্দি হয়।

কিন্তু দেবী চণ্ডী তার ভক্ত কালকেতুকে মুক্তি এবং রাজ্য ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কলিঙ্গরাজকে স্বপ্নে নির্দেশ দিল। রাজ্য ফিরে পাওয়ার পর কালকেতু বাকি জীবন সুখে রাজত্ব করল এবং তারা মৃত্যুর পর নীলাম্বর ও ছায়ারূপে স্বর্গে ফিরে গেল।

ধনপতি সদাগরের কাহিনী

উজানি নগরেরর তরুণ বণিক ধনপতি বাড়িতে পায়রা ওড়াবার সময় সেটা অন্য বাড়ির তরুণী খুল্লনার আঁচলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। খুল্লনা আসলে ছিল স্বর্গভ্রষ্ট ইন্দ্ৰ-নর্তকী রত্নমালা। পায়রা আনতে গিয়ে খুল্লনাকে তার স্ত্রী লহনার খুড়তুত বোন বলে জানতে পারে এবং তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতে মনস্থ করে। লহনার আপত্তির মুখে পাঁচ তোলা সোনা ও শাড়ি দিয়ে সদাগর তাকে রাজি করায়। মহাসমারোহে বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু পরপরই সদাগরকে সিংহলে যেতে হয় গৌড়ের রাজার জন্য সোনার পিঞ্জরা আনতে। তার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে লহনা-খুল্লনার দিন সম্প্রীতিতেই কাটছিল, কিন্তু দাসী দুর্বলার ষড়যন্ত্রে তাতে ফাটল ধরে এবং খুল্লনাকে ছাগল চরাতে বনে যেতে হয়। একটি ছাগল হারিয়ে গেলে সে চণ্ডীর পূজা দিয়ে ছাগল ফিরে পায়। দেবীর স্বপ্নাদেশে লহনাও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার শুরু করে এবং সদাগরও সিংহল থেকে ফিরে আসে। দেশে ফিরে বণিক পিতৃশ্রাদ্ধের আয়োজন করে। নিমন্ত্রিত বণিকেরা খুল্লনার সতীত্বে সন্দেহ করে খাদ্যগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়৷ ফলে সতীত্ব পরীক্ষা হয় ও সবগুলোতে খুল্লনা সগৌরবে উত্তীর্ণ হয়।

ইতোমধ্যে খুল্লনা গর্ভবতী হয়, কিন্তু সদাগরকে আবার যেতে হয় সিংহলে। যাবার সময়ে শিব উপাসক ধনপতি খুল্লনার চণ্ডীপূজার দ্রব্যাদি পদাঘাতে নষ্ট করে। ফলে বাণিজ্যে তাকে শাস্তি পেতে হয়। সমুদ্রে জাহাজডুবি হয় ও কমলে-কামিনীরূপে দেবী তাকে ছলনা করেন। ধনপতি সিংহলে গিয়ে কমলে-কাহিনীর কথা সিংহল রাজাকে জানায়, কিন্তু রাজাকে দেখাতে না-পেরে কারারুদ্ধ হয়।

ইন্দ্রের নর্তক মালাধর খুল্লনার সন্তান শ্রীমন্তরূপে জন্মগ্রহণ করে। সে লেখাপড়া শিখে বড় হয়। বহুদিন পিতাকে না-দেখে পিতার সন্ধানে সেও সিংহলে যায়। সমুদ্রে সেও কমলে-কামিনী দেখে ও সিংহলে গিয়ে রাজাকে জানায়। দেখাতে পারলে রাজা তাকে অর্ধেক রাজত্ব ও রাজকন্যা দেবার প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু শ্রীমন্ত ব্যর্থ হয়। রুষ্ট রাজার আদেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শূলে দেবার জন্য। সেখানে সে চণ্ডীর স্তব শুরু করে। - চণ্ডী আবির্ভূত হয় ও তার দাপটে সন্ত্রস্ত রাজা শ্রীমন্তকে ও তার পিতা ধনপতিকে মুক্তি দেয়। রাজকন্যা সুশীলার সাথে মহাসমোরহে শ্রীমন্তের বিয়ে হয়। অতঃপর তারা সবাই দেশে ফিরে আসে – বণিকসমাজেও চণ্ডীপূজা প্রচলিত হয়। এভাবে দায়িত্বপালন শেষে শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গ থেকে আগত দেবদেবীরা স্বর্গে ফিরে যায়। 

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...