Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ || আধুনিক যুগ

আঠারো শতকের শেষার্ধে ও উনিশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃশ্যমান হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণী ধারার সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিষয় ছিল ধর্ম অথবা রাজবন্দনা আর আঙ্গিকে ছিল কেবলই কবিতা। কিন্তু আধুনিক যুগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের নব নব শাখা বিস্তৃত হলো। এ সময়ে মানবতাবোধ, যুক্তিবাদ, সমাজসচেতনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, গদ্যের প্রতিষ্ঠা, স্বদেশপ্রেম, রোমান্টিক দৃষ্টি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য সাহিত্যে মূর্ত হয়ে উঠে । ১৮০১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত আধুনিক হলে ও প্রকৃতপক্ষে আধুনিক যুগ শুরু ১৮৬০ সালের দিকে মাইকেল মুধুসূদনের আবির্ভাবের মাধ্যমে।

বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ

বাংলা সাহিত্যে গদ্যের সূচনা হয় উনিশ শতকে। ড. সুকুমার সেন বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ কালকে ৪ ভাগে ভাগ করেছেন যথা:

প্রথম স্তরসূচনা পর্ব- ষোড়শ শতাব্দী থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
দ্বিতীয় স্তরউন্মেষ পর্ব- ১৮০০ ( শ্রীরামপুর মিশন) থেকে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
তৃতীয় স্তরঅভ্যূদয় পর্ব- ১৮৪৭ ( বিদ্যাসাগর ) থেকে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
চতুর্থ স্তরপরিণতি পর্ব- ১৮৬৫ ( বঙ্কিমচন্দ্র) থেকে বর্তমান পর্যন্ত

বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে যথা: প্রথম পর্যায় এবং দ্বিতীয় পর্যায়।

প্রথম পর্যায়

আধুনিক যুগকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ১৮০১-১৮৬০ সাল পর্যন্ত প্রথম পর্যায় এবং ১৮৬১ থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়। মানবিকতা, ব্যক্তিসচেতনতা, সমাজবোধ, দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবোধ, আত্মচেতনা ও আত্মপ্রসার, মৌলিকত্ব, নাগরিকতা, আঙ্গিকগত বৈচিত্র্য, মুক্তবুদ্ধি প্রভৃতি আধুনিক যুগের লক্ষণ।

ঢাকার ভূষণার জমিদারপুত্রকে পর্তুগিজ দস্যুরা ধরে নিয়ে এক মিশনারীর কাছে বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। এ জমিদারপুত্রই পরে দোম এন্টিনিও দ্য রোজারিও নামে পরিচিত হন এবং খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য বই লিখেন। ১৭৪৩ সালে রচিত তাঁর ‘ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ' বাংলা গদ্যের প্রাথমিক সূচনা। এটি লেখা হয় প্রশ্নোত্তর আকারে। এটি বাঙালির লেখা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কিন্তু বাংলা হরফে লিখা নয়। গ্রন্থটি রোমান হরফে পর্তুগালের লিসবন থেকে মুদ্রিত হয়েছিল।

আধুনিক যুগের উনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যে গদ্যরীতির প্রচলন ঘটে। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে মূলত দলিল দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, আইনশাস্ত্রে গদ্য সীমাবদ্ধ ছিল। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে আসামের রাজাকে কোচবিহারের রাজার একটি পত্রকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাথমিক নিদর্শন ধরা হয়। রোমান ক্যাথলিক পর্তুগিজ পাদ্রি মনো এল দ্য আসসুম্পসাঁও কর্তৃক ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দে রচিত এবং ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে রোমান হরফে মুদ্রিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ' গ্রন্থটি বাংলা গদ্যের প্রাথমিক প্রচেষ্টার নির্দশন হিসেবে উল্লেখযোগ্য। গ্রন্থটি বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার নাগরী নামক স্থানে লিখিত। ১৭৪৩ সালে মনো এল দ্য আসসুম্পসাঁও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দকোষ তৈরির কাজ করেন যা তিনি শেষ করতে পারেননি। এছাড়া তিনি ব্যাকরণের নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করেন।

দ্বিতীয় পর্যায়

১৮০০ সালে ডেনিশদের শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে বাংলা ভাষায় মুদ্রিত হয় মথি রচিত ‘মিশন সমাচার’ । তবে এটি বাঙালির লেখা নয়। ১৮০০ সালের ৪ মে কলকাতার লালবাজারে লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা গদ্যের বিকাশে এ প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ অবদান রয়েছে।

১৮০১ সালের ২৪ নভেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন পাদ্রী উইলিয়াম কেরি। তিনি নিজে বাংলা বই রচনা করেন এবং নানা পণ্ডিত ও শিক্ষকদের দিয়ে বাংলা বই রচনা করান। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজদের বাংলা শিক্ষা দেয়া ।

উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন' বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত গদ্যগ্রন্থ।একে বাংলা ভাষার কথ্যরীতির প্রথম নিদর্শনও বলা হয়ে থাকে। তবে মথি রচিত ‘মিশন সমাচার’ বাংলা ভাষার প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ বলা হলে ও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন' । কারণ বাংলা গদ্য সাহিত্যের উদ্ভব ‍ ও বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদানই সর্বাধিক। এক কথায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকেই বাংলা গদ্য সাহিত্যের মূল বিকাশ শুরু। রামরাম বসুর ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র' বাঙালির লেখা এবং বাংলা ভাষায় প্রথম মুদ্রিত গদ্যগ্রন্থ। উইলিয়াম কেরি বাংলা শিখেছিলেন রামরাম বসুর কাছে। রামরাম বসু ছিলেন আরবি-ফারসি মেশানো সহজ বাংলার পক্ষপাতী। তিনি কেরি সাহেবের মুন্সী নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর ‘লিপিমালা' বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রসাহিত্য।

উইলিয়াম কেরি বঙ্গদেশে আসেন ১৭৯৩ সালে। ছাপাখানার কাজের প্রয়োজনে তিনি নিয়ে আসেন উইলিয়াম ওয়ার্ড ও যশুয়া মার্সম্যানকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধিতার মুখে তিনি ডেনিশদের শ্রীরামপুর মিশনে আশ্রয় নেন এবং সেখানে ১৮০০ সালে প্রেস তৈরি করেন। তবে ব্রিটিশদের গ্রেফতারের ভয়ে তারা কলকাতায় যেতেন না। ১৮০০ সালে গভর্নর জেনারেল ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ চালু করলে এর বাংলা বিভাগ চালু করার জন্য উপযুক্ত লোক পাওয়া যায়নি। সেজন্য তিনি উইলিয়াম কেরিকে দায়িত্ব দেন কেরির সকল শর্ত মেনে নিয়ে।

উইলিয়াম কেরি মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের সাহায্যে লিখেছিলেন একটি বাংলা ব্যাকরণ। তখনকার গদ্য ছিল আরবি-ফারসি শব্দপ্রধান। পরবর্তীতে ফরস্টার তাঁর মুনশীদের সংস্কৃত প্রধান রীতি অনুসরণ করে আইনের বই অনুবাদের নির্দেশ দেন। এর ফলে জমিদারের মত সহজ শব্দ হয়ে ওঠে ‘ভূম্যধিকারী’। পরবর্তীতে ১৮০৫ সালে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার কেরিকে প্রভাবিত করে তাঁর ব্যাকরণের দ্বিতীয় সংস্করণে সংস্কৃতপ্রধান ভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেন ৷

১৮০১ সালে কেরি বাংলা ও সংস্কৃতের শিক্ষক হিসেবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে নিযুক্ত হন। ১৮০৭ সালে তিনি এ বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অপরাপর প্রধান পণ্ডিত ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামরাম বসু, গোলকনাথ শর্মা প্রমুখ ।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর

১. বাংলা সাহিত্যে কখন গদ্যের সূচনা হয় ? [ ১৮ তম বিসিএস]

  • নবম শতকে
  • ত্রয়োদশ শতকে
  • ষোড়শ শতকে
  • উনিশ শতকে

২. গণসাহিত্য শব্দে গণ কথাটি ব্যবহৃত হয়- [ সঞ্চয় পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক: ০৯]

  • সাধারণ মানুষ অর্থে
  • জনগণের রচিত সাহিত্য অর্থে
  • লোকসাহিত্য অর্থে
  • জনগণের জন্য রচিত সাহিত্য অর্থে

৩. কোন সাহিত্যাদর্শের মর্মে নৈরাশ্যবাদ আছে ? [২৪তম বিসিএস (বাতিল পরীক্ষা) ]

  • রোমান্টিসিজম
  • আধুনিকতাবাদ
  • উত্তরাধুনিকতবাদ
  • বাস্তববাদ

৪. আধুনিকতার লক্ষণ কী ? [শ্রম পরিদপ্তরে জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা:০৯ ]

  • ইংরেজি শিক্ষা
  • দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো
  • সহশিক্ষা
  • স্বদেশ প্রেম ও মানবতাবোধ

৫. বাংলা সাহিত্যে আধুনিক পর্ব শুরু হয় - [ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অফিসার : ১১]

  • আঠার শতকে
  • সতের শতকে
  • উনিশ শতকে
  • বিশ শতকে

৬. বাংলা কথ্য ভাষার আদি গ্রন্থ কোনটি ? [ ২৯তম বিসিএস]

  • প্রভু যিশুর বাণী
  • কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ
  • মিশনারি জীবন
  • ফুলমণি ও করুণার বিবরণ

৭. বাংলা গদ্যের আদি নিদর্শন কোনটি ? [সোনালী ব্যাংক সিনিয়র অফিসার : ১৮ ]

  • চর্যাপদ
  • কোচবিহার রাজ্যের লেখা চিঠি
  • শেখ শুভোদয়া
  • নরোত্তম দাসের দেহকড়চা

৮. গদ্য সাহিত্য কোন যুগের সৃষ্টি ? [ পানি উন্নয়ন বোর্ড : ১৯]

  • মধ্যযুগ
  • প্রাচীন যুগ
  • আধুনিক যুগ
  • অন্ধকার যুগ

৯. বাংলা সাহিত্যের প্রথম গদ্যগ্রন্থ কোনটি ? [বেসামরিক বিমান চলাচলের সিনিয়র অফিসার: ২১ ]

  • সমাচার দর্পণ
  • কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ
  • সেক শুভোদয়া
  • আলালের ঘরের দুলাল

১০. বাংলা সাহিত্যে গদ্যের সূচনা হয় কবে থেকে ? [প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক : ১৯ ]

  • সতের শতক
  • আঠার শতক
  • ঊনিশ শতক
  • বিশ শতক

১১. বাঙালির লেখা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ ‘ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক সংবাদ’-এর রচয়িতা কে ? [সহকারী শ্রম অফিসার : ০৩ ]

  • মৃত্যঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার
  • হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও
  • দোম আন্তোনিয়ো
  • হেনরী পিটস ফরস্টার

১২. বাংলা ভাষায় মুদ্রিত প্রথম গদ্যগ্রন্থ কোনটি ? [সমন্বিত ৭ ব্যাংকের অফিসার: ২৩ ]

  • সেক শুভোদয়া
  • মঙ্গল সমাচার
  • মিশন সমাচার
  • কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ

 

Full Stack Web Developer & Content Creator

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...