এক নজরে ধ্বনিতত্ত্বের সংখ্যাতত্ত্ব!


 ❀ এক নজরে ধ্বনিতত্ত্বের সংখ্যাতত্ত্ব

❐ বাংলা ভাষায় বর্ণমালা ➺ ১টি।

❐ মোট বর্ণ/সরল বর্ণ/অসংযুক্ত বর্ণ ➺ ৫০ ⇢ অ-ঁ পর্যন্ত।

❐ বাংলা ভাষায় মোট ধ্বনি ➺ ৩৭টি।

❐ বাংলা ভাষায় বর্ণ ➺ ২ ধরনের ⇢ স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ।

❐ স্বরবর্ণ ➺ ১১টি ⇢ স্বরধ্বনি ৭টি)।

❐ ব্যঞ্জন বর্ণ ➺ ৩৯টি ⇢ ব্যঞ্জন ধ্বনি ৩০টি)।

❐ মৌলিক স্বরবর্ণ ➺ ৬টি ⇢ অ, আ, ই, উ, এ, ও।)

❐ মৌলিক স্বরধ্বনি ➺ ৭টি ⇢ অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা)

❐ হ্রস্বস্বর ➺ ৪টি ⇢ অ, ই, উ, ঋ।)

❐ দীর্ঘস্বর ➺ ৭টি ⇢ আ, ঈ, উ, এ, ঐ, ও, ঔ।)

❐ যৌগিক স্বরবর্ণ/ যৌগিক স্বরজ্ঞাপক বর্ণ ➺ ২টি ⇢ ঐ, ঔ।

❐ যৌগিক স্বরধ্বনি/ দ্বিস্বর/ যুগ্মস্বর/ সান্ধ্যস্বর ➺ ২৫টি।

❐ অর্ধস্বর ধ্বনি ➺ ৪টি ⇢ ই, উ, এ, ও।

❐ সম্মুখ স্বরধ্বনি ➺ ৩টি ⇢ ই, এ, অ্যা।

❐ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি ➺ ৩টি ⇢ উ, ও, অ।

❐ কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি ➺ ১টি ⇢ আ।

❐ উচ্চ-স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ ই, উ।

❐ উচ্চমধ্য স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ এ, ও।

❐ নিম্নমধ্য স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ অ্যা, অ।

❐ নিম্ন-স্বরধ্বনি ➺ ১টি ⇢ আ।

❐ সংবৃত স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ ই, উ।

❐ অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ এ, ও।

❐ অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি ➺ ২টি ⇢ অ্যা, অ।

❐ বিবৃত স্বরধ্বনি ➺ ১টি ⇢ আ।

❐ স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার ➺ ১০টি।

❐ স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার হয় না ➺ ১টি ➺ অ।

❐ স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ আছে ➺ ১১টি।

❐ ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ/ ফলা বর্ণ ➺ ৬টি ⇢ ম, ন, র, ব, য, ল।

❐ পূর্ণমাত্রা বর্ণ মোট ➺ ৩২টি।

❐ অর্ধমাত্রা বর্ণ মোট ➺ ৮টি ⇢ ঋ, খ, গ, ণ, থ, ধ, প, শ।

❐ মাত্রাহীন বর্ণ ➺ ১০টি ⇢ এ, ঐ, ও, ঔ, ঙ, ঞ, ৎ, ং,৪,।

❐ পূর্ণমাত্রার স্বরবর্ণ ➺ ৬টি ⇢ অ, আ, ই, ঈ, উ, উ।

❐ পূর্ণমাত্রার ব্যঞ্জনবর্ণ ➺ ২৬টি।

❐ অর্ধমাত্রার স্বরবর্ণ ➺ ১টি ⇢ ঋ।

❐ অর্ধমাত্রার ব্যঞ্জনবর্ণ ➺ ৭টি ⇢ খ, গ, ণ, থ, ধ, প, শ।

❐ মাত্রাহীন স্বরবর্ণ ➺ ৪টি ⇢ এ, ঐ, ও, ঔ।

❐ মাত্রাহীন ব্যঞ্জনবর্ণ ➺ ৬টি ⇢ ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, ।

❐ বর্গীয় বর্ণ মোট ➺ ২৫টি ➺ ক-ম পর্যন্ত।

❐ স্পর্শ বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন ➺ ১৬টি/২০টি/২৫টি।

❐ অন্তঃস্থ বর্ণ ➺ ৪টি ⇢ য, র, ল, ব (অন্তঃস্থ ধ্বনি ৩টি)।

❐ খৃষ্টধ্বনি ➺ ৪টি ⇢ চ, ছ, জ, ঝ।

❐ নাসিক্য বা আনুনাসিক ধ্বনি ➺ ৩টি ⇢ ঙ, ন, ম।

❐ নাসিক্য বর্ণ ➺ ৭টি ⇢ ঙ, ঞ, ণ, ন, ম,ং,।

❐ উষ্ম বর্ণ ➺ ৪টি ⇢ শ, ষ, স, হ (তবে উষ্মধ্বনি ৩টি-বাদ 'ষ')।

❐ শিস বর্ণ ➺ ৩টি ⇢ শ, ষ, স (তবে শিসধ্বনি ২টি-শ, স)।

❐ পার্শ্বিকধ্বনি ➺ ১টি ⇢ ল।

❐ কম্পনজাত ধ্বনি ➺ ১টির।

❐ তরল ধ্বনি ➺ ২টি ⇢ র, ল।

❐ তাড়নজাত/ তাড়িত ধ্বনি বা বর্ণ ➺ ২টি ⇢ ড়, ঢ়।

❐ পরাশ্রয়ী বর্ণ ➺ ৩টি ⇢ ংঃঁ

❐ অযোগবাহ বর্ণ ➺ ২টি ⇢ ংঃ

❐ আনুসাসিক স্বরধ্বনি ➺ ৭টি ⇢ অঁ, আঁ, ইঁ, উ, এঁ, ওঁ, অ্যাঁ।

❐ ভাষার মূল উপাদান কোনটি? ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ভাষার মূল উপকরণ কোনটি? -বাক্য।

❐ ভাষার মৌলিক উপাদান কোনটি? ➺ শব্দ।

❐ ভাষার বৃহত্তম একক কোনটি? ➺ বাক্য।

❐ ভাষার ক্ষুদ্রতম একক কোনটি? ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ বাক্যের একক বা মৌলিক উপাদান? ➺ শব্দ।

❐ বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক কোনটি? ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক/ অংশ কোনটি? ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।


 

❐ ধ্বনিতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা

▣ ধ্বনির ও বর্ণের সংজ্ঞা ও পার্থক্য:

❐ মানুষের মুখে যা উচ্চারণ করে তা হলো ধ্বনি (speech sound); আর সেই ধ্বনির লিখিত রূপ বা নির্দেশক চিহ্ন বা প্রতীক বা সাংকেতিক চিহ্ন বা দৃশ্য রূপকে বলে বর্ণ (Letter)। এক কথায় ধ্বনি হচ্ছে উচ্চারণের মাধ্যম আর বর্ণ হচ্ছে লিখার মাধ্যম। ৫টি উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি-অ, আ, অ্যা, ক, ক্যা-এখানে প্রত্যেকটিই ধ্বনি, কারণ উচ্চারণ করা যায়। তবে প্রত্যেকটি বর্ণ নয়, কারণ বাংলা ভাষায় মোট বর্ণ সংখ্যা আছে ➺ ৫০টি। এই ৫০টি বর্ণের মধ্যে ৩টি (অ, আ, ক) আছে, তাই এই ৩টি বর্ণ হবে, আর ২টি (অ্যা, ক্যা) ৫০টি বর্ণের মধ্যে নেই, তাই এগুলো বর্ণ হিসেবে ধরা হবে না; কেবল ধ্বনি হিসেবেই থাকবে।

▣ বর্ণমালা ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

❐ আমি একটি উদাহরণ দিয়ে বর্ণমালা ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর চেষ্টা করছি। ধরুন, শীতের সকালে শিউলি ফুল তুলতে গিয়ে ৫০টি ফুল পেয়েছেন। এখন আপনি এই ৫০টি ফুলকে একসাথে নিয়ে সুঁই, সুতো দিয়ে ১টি শিউলি ফুলের মালা গাঁথলেন। আচ্ছা, এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, শিউলি ফুলের মালা কয়টি? তাহলে আপনি অবশ্যই উত্তর দিবেন ১টি। আর যদি বলা হয় এই ১টি মালায় ফুল কয়টি আছে? সেক্ষেত্রে আপনি উত্তর দিবেন ৫০টি। অনুরূপভাবে ধরুন, শিউলি ফুলের মালা বর্ণমালা ১টি, আর শিউলি ফুলের মালায় ফুল বর্ণমালায় বর্ণ ৫০টি। সুতরাং বর্ণমালা ১টি, বর্ণমালায় মোট বর্ণ ৫০টি। আশা করি ব্যাপারটি ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন।

▣ বর্ণমালা: যে কোনো ভাষায় ব্যবহৃত লিখিত বর্ণসমষ্টটিকে বলা হয় বর্ণমালা (Alphabet)। বাংলা ভাষায় বর্ণমালার সংখ্যা ১টি। বাংলা ভাষা লেখার মোট বর্ণের সংখ্যা বা সাংকেতিক চিহ্ন বা প্রতীক ৫০টি। এই ৫০টি বর্ণ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- স্বরবর্ণ (১১টি) ও ব্যঞ্জনবর্ণ (৩৯টি)। তবে বাংলা ভাষায় মোট ধ্বনির সংখ্যা ৩৭টি। এই ৩৭টি ধ্বনি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- স্বরধ্বনি (৭টি) ও ব্যঞ্জনধ্বনি (৩০টি)। সূত্র: বাংলা একাডেমির 'প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (সংস্করণ: ২০১৬); 'প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (১ম খণ্ড)')

❐ নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

▣ ১ . স্বরবর্ণ: স্বরধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় স্বরবর্ণ। যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিহ্বরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরবর্ণ (vowel sound)। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ মোট ১১টি। যথা- অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।

▣ স্বরধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিহ্বরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি (vowel sound)। বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি সংখ্যা ৭টি। যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

▣ ২. ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিহ্বরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ (consonant sound)। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণে সংখ্যা ৩৯টি। যথা- ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ় য়, ৎ, ং, ঃ, 1

▣ ব্যঞ্জনধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিহ্বরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি (consonant sound)। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ৩০টি। যথা- ক, খ, গ. ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, র, ল, শ, স, হ, ড. চু।

▣ উচ্চারণানুসারে স্বর ২ ধরনের। যথা-হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর।

❐ ১. হ্রস্বম্বর: যে স্বরের উচ্চারণে অল্প সময় লাগে তাকে হ্রস্বম্বর বলে। হ্রস্বস্বর বর্ণ ৪টি। যথা- অ, ই, উ, ঋ।

❐ ২. দীর্ঘস্বর: যে স্বরের উচ্চারণে দীর্ঘ সময় লাগে তাকে দীর্ঘস্বর বলে। দীর্ঘস্বর বর্ণ ৭টি। যথা- আ, ঈ, উ, এ, ঐ, ও, ঔ। [হস্বস্বর ৪টি ছাড়া বাকি ৭টি দীর্ঘ স্বর।। আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে আগত ধ্বনির উচ্চারণ সাধারণত দীর্ঘ হয়ে থাকে।

▣ গঠনানুসারে স্বর ২ ধরনের। যথা- মৌলিক স্বর ও যৌগিক স্বর।

❐ মৌলিক স্বরবর্ণ: যে স্বরবর্ণ ভেঙে উচ্চারণ করা যায় না বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাদের মৌলিক স্বরবর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরবর্ণের সংখ্যা ৬টি। যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও।

❐ মৌলিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি ভেঙে উচ্চারণ করা যায় না বা বিশ্লেষণ করা যায় না, তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি। যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা। এখানে 'অ্যা' ধ্বনি হিসেবে গণ্য হবে, কিন্তু বর্ণ হিসেবে গণ্য হবে না। তাই মৌলিক স্বরবর্ণ থেকে বাদ পড়েছে, কারণ ১১টি স্বরবর্ণের মধ্যে 'অ্যা' বর্ণটি নেই। ✓ 'অ্যা' ধ্বনির প্রবক্তা বা নামকরণ করেন ১৯৭৪ সালে ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ আব্দুল হাই।

❐ ২. যৌগিক স্বরবর্ণ: দুটি স্বর যুক্তভাবে অবিভাজ্যরূপে উচ্চারিত হলে তাই যৌগিক স্বরবর্ণ। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরবর্ণের সংখ্যা ২টি। যথা- ঐ, ঔ। লক্ষ করুন, 'ঐ' ও 'ঔ' বাংলা বর্ণমালায় একক ও স্বতন্ত্র ২টি বর্ণ কিন্তু এদের বিশ্লেষণ করলে দুটি করে বর্ণ পাওয়া যাবে। ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ) অর্থাৎ দুটি বর্ণ মিলে একটি বর্ণ তৈরি করেছে, তাই এই ২টি বর্ণকে যৌগিক স্বরবর্ণ বলা হয়। যৌগিক স্বরবর্ণের অপর নাম যৌগিক স্বরজ্ঞাপক বর্ণ।

❐ যৌগিক স্বরধ্বনি: পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়। এরূপ একসঙ্গে উচ্চারিত দুটো মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বিম্বর বলা হয়। যেমন: পড়াই। এখানে লক্ষ করুন, 'পড়াই' শব্দটি 'পড়' এর সাথে পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি (আই) যুক্ত হয়ে একটি ধ্বনি 'আই' তৈরি করেছে। আর এই 'আই' ধ্বনিটি বাংলা বর্ণমালায় একক কোনো ধ্বনি বা লিখিত রূপ নেই, তাই একে একত্রে (আই) যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনি মোট ২৫টি। তবে যৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনি ২৩টির নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই।

❐ অর্ধস্বরধ্বনি (semi-vowel): যেসব স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না সেগুলোকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে। এই ধ্বনিগুলি স্বরধ্বনির মতো হলেও ব্যাবহারিক দিক থেকে এদের আচরণ অনেকটাই ব্যঞ্জনধ্বনির মতো। বাংলা ভাষায় অর্ধস্বরধ্বনি ৪টি ই, উ, এ (=য়), ও.। স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় টেনে দীর্ঘ করা যায়, কিন্তু অর্ধস্বরধ্বনি কোনোভাবেই দীর্ঘ করা যায় না।

▣ মাত্রা বিন্যাস: (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ)

❐ বর্ণের উপরে যে রেখা বা কষি বা দাগ থাকে তাকে মাত্রা বলে। মাত্রা দুই ধরনের। যথা- পূর্ণমাত্রা (যথা- ন), অর্ধমাত্রা (যথা-ণ)। আবার কিছু কিছু বর্ণ মাত্রাহীন হয়ে থাকে। যেমন- ও,ং ইত্যাদি।

❐ মাত্রা ➺ মোট বর্ণঃ (৫০) ➺ স্বর বর্ণঃ (১১) ➺ ব্যঞ্জন বর্ণঃ (৩৯)

❐ পূর্ণমাত্রা ➺ মোট বর্ণঃ ৩২ ➺ স্বর বর্ণঃ ৬ (অআইঈউউ) ➺ ব্যঞ্জন বর্ণঃ২৬ (ক ঘ চ ছ জ ঝ ট ঠ ড ঢ ত দ ন ফ ব ভ ম য র ল য স হ ড় ঢ় য়)

❐ অর্ধমাত্রা ➺ মোট বর্ণঃ ৮ ➺ স্বর বর্ণঃ ১ (ঋ) ➺ ব্যঞ্জন বর্ণঃ৭ (খ গ ণ থ ধ প শ)

❐ মাত্রাহীন ➺ মোট বর্ণঃ ১০ ➺ স্বর বর্ণঃ ৪ (এ ঐ ও ঔ) ➺ ব্যঞ্জন বর্ণঃ৬ ( ঙ ঞ ৎ ং ঃ ঁ )

▣ কার ও ফলা আলোচনা-

❐ কার: স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ আছে বা কার হয় ১০টি। যথা- আ-কার (া), ই-কার (ি), ঈ-কার (ী), উ-কার (ু), উ-কার (ূ), ঋ-কার (ৃ), এ-কার (ে), ঐ-কার (ৈ), ও-কার (ো), ঔ-কার (ৌ)। সুতরাং স্বরবর্ণের পূর্ণরূপ আছে ১১টি বর্ণের আর স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার আছে ১০টি বর্ণের; নেই ১টি (অ) বর্ণের। (নিলীন অর্থ বিলীন বা নিমগ্ন থাকা। 'অ' যখন কোনো ব্যঞ্জন বর্ণের সাথে যুক্ত থাকে তখন তা ঐ ব্যঞ্জনের ভেতরে বিলীন/ একাকার হয়ে থাকে, অর্থাৎ কোনো শারীরিক অস্তিত্ব (Physical Existence) থাকে না, তাই 'অ' কে নিলীন বর্ণ বলে। যেমন: কক অ। বাংলা বর্ণমালায় নিলীন বর্ণ ১টি (অ)। 'অ' বর্ণের কোনো সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার নেই।।

▣ ১. ফলা: ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ আছে বা ফলা হয় ৬টি। যথা-

❐ ম-ফলা (জন্ম, পদ্মা, আত্মা),

❐ ন/ণ-ফলা (অন্ন, চিহ্ন, প্রত্নে),

❐ র-ফলা (পাত্র, নেত্র, প্রলয়),

❐ ব-ফলা (স্বাধীন, বিশ্ব, পকু),

❐ য-ফলা (সত্য, কাব্য, কার্য),

❐ ল-ফলা (পল্লব, কল্লোল, হিল্লোল)।

❐ সুতরাং ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্ণরূপ আছে ৩৯টি বর্ণের আর ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ বা ফলা আছে ৬টি বর্ণের। ফলা বর্ণগুলো মনে রাখবেন যেভাবে: মনে রবে যল।

▣ অঘোষ ধ্বনি ও ঘোষ ধ্বনি এবং অল্পপ্রাণ ধ্বনি ও মহাপ্রাণ ধ্বনি

❐ ১. অঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি (unvoiced)। ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ, শ, স ধ্বনিসমূহ অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি।

❐ ২. ঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, তাকে বলা হয় ঘোষ ধ্বনি (voiced)। গ, ঘ, ঙ৬/ং, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম, র, ল, ড়, ঢ়, হধ্বনিসমূহ ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি।

❐ ৩. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে, তাকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি (unaspirated)। ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব, ড়, শ, স ধ্বনিসমূহ অল্পপ্রাণ ধ্বনি।

❐ ৪. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে, তাকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি (aspirated)। খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ড, থ, ধ, ফ, ভ, ঢ়, হধ্বনিসমূহ মহাপ্রাণ ধ্বনি।

▣ মূল উপাদান

❐ ১. ভাষার মূল উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ২. বাক্যের মূল উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ৩. শব্দের মূল উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

▣ প্রধান উপাদান

❐ ৪. ভাষার প্রধান উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ৫. বাক্যের প্রধান উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ৬. শব্দের প্রধান উপাদান ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

▣ ক্ষুদ্রতম একক

❐ ৭. ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ৮. বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

❐ ৯. শব্দের ক্ষুদ্রতম একক ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

▣ মূল উপকরণ

❐ ১০. ভাষার মূল উপকরণ ➺ বাক্য।

❐ ১১. বাক্যের মূল উপকরণ ➺ শব্দ।

❐ ১২. শব্দের মূল উপকরণ ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

▣ একক/ মূল একক

❐ ১৩. ভাষার একক ➺ বাক্য।

❐ ১৪. বাক্যের একক ➺ শব্দ।

❐ ১৫. শব্দের একক ➺ ধ্বনি (বর্ণ)।

▣ বৃহত্তম একক

❐ ১৬. ভাষার বৃহত্তম একক ➺ বাক্য।

❐ ১৭. বাক্যের বৃহত্তম একক ➺ শব্দ

❐ ১৮. শব্দের বৃহত্তম একক ➺ হয় না।

❐ ১৯. ভাষার মৌলিক উপাদান ➺ অর্থবোধক ধ্বনি বা শব্দ। কারণ, সকল ধ্বনির অর্থ হয় না, তাই কেবল অর্থবোধক ধ্বনি। আর শব্দেই প্রথম অর্থের সংশ্লিষ্টতা দেখা দেয়। ভাষার প্রধান উদ্দেশ্য যেহেতু অর্থবাচকতা প্রকাশ করা, সেহেতু এক্ষেত্রে শব্দ ভাষার মৌলিক উপাদান। লক্ষণীয়: বাক্যের মৌলিক উপাদনও 'শব্দ'।

❐ ২০. ভাষার ইট ➺ শব্দ (আওয়াজ)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতবাদ অনুসারে, ধ্বনি দিয়ে আটবাঁধা শব্দই ভাষার ইট, বাংলায় তাকে বলি 'কথা'। এখানে 'শব্দ' বা 'আওয়াজ'-কে ভাষার ইট বলা হয়েছে। (সূত্র: বাংলাভাষা পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

❐ ২১. ভাষার প্রাণ ➺ বাক্য।

❐ ২২. বাক্যের প্রাণ ➺ শব্দ।

❐ ২৩. শব্দের ক্ষুদ্রতম একককে বলে ➺ ধ্বনি। তবে শব্দের অর্থযুক্ত ক্ষুদ্রতম এককে বলে ➺ রূপ (Morpheme)।

Premium By Raushan Design With Shroff Templates
Link copied to clipboard.